ভোর থেকে নামছে সশস্ত্র বাহিনী

প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দায়িত্ব পালনে নামছে সশস্ত্র বাহিনী। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী দেশের ৩৮৯ উপজেলায় এবং নৌবাহিনী ১৮ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবে।

আজ রোববার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান বিষয়টি জানিয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশের তিনশ’ সংসদীয় এলাকায় ‘ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী সশস্ত্রবাহিনী কাজ করবে। ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১০ দিন মাঠে থাকবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে সশস্ত্র বাহিনীর এই কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।

নির্বাচনে যেভাবে কাজ করবে সেনাবাহিনী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ‘ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্যা সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী কাজ করবেন। মূলত তারা জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকার সংযোগ স্থলে অবস্থান করবেন, প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে ইসির কাজে যাবতীয় সহায়তা দেবে সশস্ত্র বাহিনী। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বিবেচনা বা নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এই বাহিনী।

পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে সশস্ত্র বাহিনী। অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ডাকা হলে এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা না গেলে ঘটনাস্থলে থাকা সর্বোচ্চ পদের ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারবেন। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশন্ড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেফতার করার নির্দেশ দিতে পারবেন। সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত নির্দেশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা লিখিত আকারে দেবেন।

উপকূলবর্তী এলাকায় নৌবাহিনী প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা এই পরিপত্রে বলা হয়েছে, ঝুঁকির বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে কম-বেশি করা যাবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনাসদস্য সংরক্ষিত হিসেবে মোতায়েন থাকবেন। বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান জননিরাপত্তা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও বাহিনীগুলোর অনুরোধে উড্ডয়নে সহায়তা করবেন।

ইভিএম পরিচালনায় থাকছেন সাড়ে ৩ হাজার সেনা এদিকে আসন্ন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হতে যাওয়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনার জন্য প্রায় ৩ হাজার ৩শ’ সেনা সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এরমধ্যে ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তার জন্য থাকবে মোট ২ হাজার ৫৩৫ জন সেনা সদস্য। আর প্রতি কেন্দ্রের জন্য গঠিত একেকটি টিমে থাকবে সশস্ত্র বাহিনীর তিন জন করে সদস্য।

এদের মধ্যে একজন কর্পোরাল, দু’জন ল্যান্স কর্পোরাল অথবা সৈনিক সেনা সদস্য। তাদের কাছ থেকে তথ্য নেবে ভ্রাম্যমাণ কারিগরি টিম। এই টিমে থাকবেন মোট ৫০৭ জন সেনা সদস্য। প্রতি পাঁচ কেন্দ্রের জন্য গঠিত প্রতি টিমে থাকবেন তিন জন করে সেনা সদস্য। এদের মধ্যে একজন সার্জেন্ট, দুইজন কর্পোরাল অথবা ল্যান্স কর্পোরাল বা সৈনিক সেনা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

ভ্রাম্যমাণ টিমের কাছ থেকে তথ্য নেবে ভ্রাম্যমাণ তদারকি টিম। প্রতি ১৫টি কেন্দ্রের জন্য একটি টিম থাকবে। এক্ষেত্রে মোট ১৬৯ জন সেনা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন একজন জেসিও, দু’জন সার্জেন্ট অথবা ল্যান্স কর্পোরাল বা সমমর্যাদার সেনা সদস্য। এদের উপরে কাজ করবে প্রতি ৫০ কেন্দ্রের জন্য গঠিত একটি করে মোট ১৭টি টিম। আর প্রতি টিমে তিন জন করে মোট ৫১ জন সেনা সদস্য কাজ করবেন। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন মেজর অথবা ক্যাপ্টেন অথবা ল্যাফটেন্যান্ট, একজন জেসিও এবং কর্পোরাল অথবা ল্যান্স কর্পোরাল অথবা সৈনিক সমমর্যাদার সেনা সদস্য। এই টিম সহকারি রিটার্নিং অফিসার বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা কার‌্যালয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।

আর সবগুলো টিমের কাজ তত্ত্বাবধায়ন করবে উচ্চ পর্যায়ের আরেক টিম। প্রতি আসনে ৫ জন করে সেনা সদস্য নিয়ে এই টিম গঠিত হবে। অর্থাৎ মোট ৬টি আসনে ৩০ জন সেনা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এতে একজন মেজর, দু’জন ক্যাপ্টেন অথবা ল্যাফটেন্যান্ট, একজন জেসিও অথবা সার্জেন্ট এবং ১জন কর্পোরাল অথবা ল্যান্স কর্পোরাল অথবা সৈনিক সমমর্যদার সদস্য। এই টিম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার‌্যালয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। ইভিএম পরিচালনা করা হবে দু’টি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে। যার একটি থাকবে নির্বাচন কমিশনে আর একটি থাকবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে। সেনা সদস্যরা কাজ করবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কন্ট্রোল রুমের অধীনে। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কন্ট্রোল রুম কাজ করবে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুমের অধীনে। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরি টিমের মাধ্যমে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

এ বিষয়ে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, যে ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সেখানে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তবে বাহিনীর পোশাকে থাকবেন কিন্তু কোনো ধরনেরই অস্ত্র-গোলাবারুদ বহন করবে না। ইভিএম কেন্দ্রে যেসব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকবেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নিকটতম টহল দল ও স্থানীয় ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। পরিপত্রে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি কেন্দ্রীয় কো-অর্ডিনেশন সেল থাকবে। সেলের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অনুরূপ জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন সেল স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রীয় সেলে রাখা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন।