পদ্মা সেতু প্রকল্পে শ্রমিক বিক্ষোভের ব্যাখ্যা দিল সিআরইসি

প্রকাশিত: ১:০৬ পূর্বাহ্ণ, মে ৮, ২০২০

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সিতারামপুর এলাকায় নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রকল্পের শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছে এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি)।

বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যমান প্রতিকূল সময়েও পদ্মা সেতু রেল-সংযোগ প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখতে প্রকল্পের চার হাজার ৭৪২ জন স্থানীয় শ্রমিকের সুরক্ষা ও সুস্থতায় নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় শ্রমিকদের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে তাদের সুস্থতা ও সুরক্ষায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ। গত ৬ মে থেকে প্রকল্পের ১৭০ কিলোমিটারের মধ্যে এমন ৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে আইসোলেশনে আছেন স্থানীয় শ্রমিকরা। উল্লেখ্য, এ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ব্যয়ভার বহন করছে সিআরইসি। এর আগে শ্রমিকদের নিজেদেরই থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করতে হতো। এছাড়াও যেসব শ্রমিক নিজ থেকেই এ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে চান তাদের জন্য অতিরিক্ত মজুরিও বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির গৃহীত এসব পদক্ষেপের মাধ্যমেই শ্রমিকদের কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি থেকে দূরে রেখে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। শুরুর দিকে শ্রমিকরা এ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে পাশের গ্রামে থাকার চেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকাকে নিরাপদ মনে করে তারা দ্রুতই আশ্রয়কেন্দ্রে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রমিকদের বেশিরভাগই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসে।

আরও উল্লেখ্য, মহামারির সংকটে গৃহীত এসব পদক্ষেপের কারণে অতিরিক্ত অনেক ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে সিআরইসিকে। যদিও সিআরইসিকে গত ২৩ মাসে এ প্রকল্পের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকল্প অন্তর্বর্তীকালীন কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি।

দুর্ভাগ্যক্রমে গত ৬ মে রাত ৯টার দিকে মাওয়ায় সিআরইসির এক আশ্রয়কেন্দ্রে শ্রমিকদের একটি দল জড়ো হয়ে অভিযোগ করে, বরাদ্দকৃত অস্থায়ী মজুরি তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। এ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫০০ শ্রমিক অবস্থান করছিলেন। এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন অসন্তুষ্ট কিছু শ্রমিক, যাদের আইসোলেশনের নিয়ম ভঙ্গ করে পাশের গ্রামে নিজদের বাড়িতে যাওয়ার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে বিষয়টি সুরাহায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাংলাদেশি নিরাপত্তাকর্মীরা শ্রমিকদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে।

শ্রমিক অসন্তোষের মুখে, তাদের ছত্রভঙ্গ করতে একজন নিরাপত্তাকর্মী শটগান দিয়ে ফাঁকা গুলি চালায়। এর ফলে এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে আট শ্রমিক আহত হয় এবং তাদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ দুর্ঘটনায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত এবং আহত শ্রমিকদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। বর্তমানে মাওয়ায় ওই আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং একইসাথে বাকি ৮৫টি ক্যাম্পেও স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় আইন ও বিধি মেনে চলার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর সিআরইসি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সমাজের প্রতিও অঙ্গীকারবদ্ধ। একইসাথে আমাদের কর্মীদের বৈধ অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়িয়ে চলার স্বার্থে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারকে আমরা অনুরোধ জানাই।