নিজের ‘ভুল বাজিতে ফেঁসে গেছেন’ নেতানিয়াহু

প্রকাশিত: ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, মে ১৫, ২০২১
ইসরায়েলি বিমান হামলার পর গাজায় আগুন (ইনসেটে নেতানিয়াহু)

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন। গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের ঘটনা এবার ঘটেছে। সংঘাত বন্ধে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। তবে মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়, নিজের ‘ভুল বাজিতে ফেঁসে গেছেন’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।

আল জাজিরার বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, ‌’ভুল বাজি ধরেছেন নেতানিয়াহু। আর এতে তিনি ফেঁসে গেছেন। কারণ ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। একবার যদি বিমানবন্দরগুলো সত্যি হুমকির মধ্যে পড়ে যায় তাহলে তা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।’

ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী

‘নেতানিয়াহু এমন কিছু শুরু করেছিলেন যা তিনি আশা করেননি। পরিস্থিতি যে এভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তা তিনি কল্পনা করেননি। যেমনটি আমরা দেখেছি, ফিলিস্তিন ও ইহুদিবাদী ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে। পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে দেখেছি। আমরা অবশ্যই গাজায় এটি দেখছি।’

মারওয়ান বিশারা বলেন, ‘সত্যি বলছি, ২০১৪ সালেও আমি এমন চিত্র দেখিনি। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে দিন দিন জনমত বাড়ছে। যেমন-মিশর, জর্ডান এবং লেবানন এগিয়ে এসেছে।’

এই বিশ্লেষক মনে করেন এসব কারণে বর্তমানে নেতানিয়াহু সঙ্কটে রয়েছেন। এছাড়া রাজনৈতিকভাবেও তিনি একঘরে হয়েছেন।

সম্প্রতি নেতানিয়াহু বলেন, ‘যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

এদিকে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি তাদের হামলা বন্ধ না করে তাহলে তারাও চুপ করে বসে থাকবে না।

দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ইসরায়েলের দিকে একের পর এক রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হামাস।

ইসরায়েলের জন্য বিপদের কারণ হচ্ছে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত আটজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই শিশু, একজন ভারতীয়, একজন বয়স্ক নারী ও এক ইসরায়েলি সেনাসদস্য রয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন কয়েক ডজন।

হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটি, দুটি আয়রন ড্রোম (আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা) এবং একটি রাসায়নিক কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এছাড়া নেজেভ মরুভূমির নাহাল ওজ কিবুৎজ রাসায়নিক কারখানায় আত্মঘাতী শিহাব ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।

গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা বিধ্বস্ত ভবনের সামনে এক নারীর আহাজারি

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা আয়রন ডোম ফিলিস্তিনিদের সব রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে পারছে না।

এর আগে দেখা গিয়েছিল, হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যে রকেট হামলা চালাত, তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হত। বিশেষ করে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হামাসের রকেট হামলার বাইরে থাকত। কিন্তু এবার দেখা দেখা গেছে উল্টো চিত্র।

কয়েকদিন আগে তেল আবিবে যখন হামাস রকেট হামলা করে, তখন দেশটির সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। হামলায় একজন ইসরায়েলি মারাও যান।

এদিকে তেল আবিবের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে ইউরোপীয় এয়ারলাইনগুলো। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও ভার্জিন আটলান্টিক, জার্মানির লুফথানসা, স্পেনের আইবেরিয়া প্রভৃতি।

অপরদিকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান সালেহ আল আরোয়ি বলেছেন, ‌’ইসরায়েলে হামলায় এ পর্যন্ত ব্যবহৃত তাদের সব ক্ষেপণাস্ত্রই ছিল পুরোনো, মূল ক্ষেপণাস্ত্র আমরা এখনো ব্যবহার করিনি।’

ইসরায়েলের দিকে হামাসের রকেট হামলা

আল-আকসা টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন কমান্ডারের শাহাদাতের কারণে প্রতিরোধ সংগ্রাম দুর্বল হয়ে পড়বে, শত্রুদের এমন ভাবনা মারাত্মক ভুল। বাস্তবে প্রতিরোধ প্রতিদিনই আরও শক্তিশালী হচ্ছে।’

গত সোমবার (১০ মে) থেকে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী, যা এখনো অব্যহত রয়েছে। এ হামলায় অন্তত ১২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় হাজার খানেক।

অন্যদিকে ইসরাইল গাজা সীমান্তে সেনা ও ট্যাংক মোতায়েন করেছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে গাজায় ৪০ মিনিটে ৪৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরায়েল। গাজার ১৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদ্রায়ি টুইটারে এ তথ্য জানান।