ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্রের, ঊর্ধ্বে নয় বিচার বিভাগের জবাবদিহিতাও
দ্রুত বিচার না হওয়ায় বাড়ছে ধর্ষণ: হাইকোর্ট
মোঃ আল আমিন হোসাইন মোঃ আল আমিন হোসাইন
সিনিয়র সম্পাদক
দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে মর্মে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ, বিশেষ করে শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর দ্রুততম সময়ে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারার দায় মূলত রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। বগুড়ার একটি শিশু ধর্ষণ মামলার আসামির জামিনসংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ছয় দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া এই রায়ের অনুলিপি গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা হলো যে, ধর্ষণসংক্রান্ত মামলার আসামিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়া ও ধূর্ত প্রকৃতির। এরা ভিকটিম ও তার পরিবারের ওপর চাপ-প্রভাব বিস্তার করে আদালতে সাক্ষ্য প্রদানে ভয়ভীতি, প্রলোভনসহ বিভিন্ন ধরনের কূটকৌশল অবলম্বন করে। ক্ষেত্রবিশেষে সালিশের নামে সামাজিক বিচার করে ভিকটিম ও তার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য এবং আদালতে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকে। এ অবস্থায় সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের বিকল্প নেই। আমরা প্রত্যাশা করছি, সরকার দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবে।’
আদালত বলেছে, দেশের বিভিন্ন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যাসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাসমূহ বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ। এর মধ্যে চার-পাঁচ বছরের পুরোনো মামলার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অভিযোগ গঠনে বিলম্ব এবং যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কয়েক মাস পরপর তারিখ পড়ছে। যদিও এ আইনের ২০(৩) ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে মামলা বিচারের জন্য নথি প্রাপ্তির তারিখ হতে ছয় মাসের মধ্যে বিচারকাজ সমাপ্ত করার। এছাড়া শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে বিচার পরিচালনার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ ও প্রতিপালন করা হচ্ছে না। বিচার বিলম্বের জন্য ট্রাইব্যুনাল, পাবলিক প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের নিকট লিখিতভাবে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও সমন্বয়হীনতার কারণে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি দৃশ্যমান নয়। এ কারণে ছয় দফা নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যুনালের সব বিচারকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনাসমূহ: সমন জারির পর ধার্য তারিখে অফিশিয়াল সাক্ষীদের (ম্যাজিস্ট্রেট/ পুলিশ/চিকিত্সক বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ) সাক্ষ্য প্রদানে আদালতে হাজির হতে হবে। সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য প্রদানে হাজির না হলে সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ দিতে বিবেচনা করবে ট্রাইব্যুনাল। অন্যান্য সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে মনিটরিং কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।