তামাক খাত থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ১২:০৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২০

তামাক কর ও মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে সরকার তামাক খাত থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জন করতে পারত। দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তামাককে করোনা সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য জোর তাগিদ দিয়ে আসছে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এসবের কোনো প্রতিফলন নেই।

তামাকবিরোধী সেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রজ্ঞা ও আত্মা শুক্রবার (১২ জুন) এক তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন।

 

তারা বলেন, সিগারেটের ৪টি মূল্যস্তর বহাল রাখায় কমদামি সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে এবং তরুণরা ধূমপান শুরু করতে উৎসাহিত হবে। ফলে সিগারেটের ব্যবহার না কমে বরং বৃদ্ধি পাবে। বাজেট প্রস্তাবে নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র ২ টাকা বাড়িয়ে ৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, অর্থাৎ প্রতি শলাকায় দাম বৃদ্ধি পাবে মাত্র ২০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ একই সময়ে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। সিগারেট বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশই নিম্নস্তরের সিগারেটের দখলে। এই স্তরে সম্পূরক শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ৫৭ শতাংশ, যা গতবছর ছিল ৫৫ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে এই স্তরের সিগারেটের প্রকৃত মূল্যহ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে।

প্রজ্ঞা ও আত্মা জানায়, বিড়ির শলাকা প্রতি মাত্র ১৬ পয়সা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে বিড়ির ব্যবহার কমবে না বরং দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে। অন্যদিকে ১০ গ্রাম জর্দার দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সন্তোষজনক। তবে ১০ গ্রাম গুলের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ৫ টাকা। এর ফলে নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে এসব তামাক পণ্যের ব্যবহার খুব একটা কমবে না। সার্বিকভাবে অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ, অকাল মৃত্যুরোধ এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তাবিত তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ কোনো ভূমিকা রাখবে না, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

সংস্থা দু’টি তাদের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আরও বলে, তামাক ও তামাকজাত পণ্য রফতানি উৎসাহিত করতে রফতানি শুল্ক অব্যাহতির সুযোগ প্রস্তাবিত বাজেটেও রাখা হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং খাদ্যশস্য চাষাবাদ ও পরিবেশবিরোধী পদক্ষেপ। এর ফলে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাবে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে এবং কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী সময়ে দেশের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বাধার সৃষ্টি করবে।

প্রজ্ঞা ও আত্মা তাদের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তামাক পণ্যের ক্ষতি সম্পর্কে বলে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখিয়ে দিয়েছে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আগাম পদক্ষেপ গ্রহণ কতটা জরুরি। তবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তামাক পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে কার্যকর কর ও মূল্যবৃদ্ধির পদক্ষেপ উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে সরকার অতিরিক্ত প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে, ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক তামাক ব্যবহারকারী ও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৪ কোটি ১০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নজিরবিহীন স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়বে এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্যও বাধাগ্রস্ত হবে।