উন্নয়ন চাইলে গ্যাসের বর্ধিত দাম মেনে নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৬:০৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে আন্দোলন না করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি মেনে ‘নিতেই’ হবে।

আর কেন গ্যাসের দাম বাড়ানো জরুরি- সে বিষয়ে সরকারের যুক্তিগুলো তিনি তুলে ধরেছেন এক সংবাদ সম্মেলনে।

সরকার গত ৩০ জুন সব পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ৩২.৮ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিলে তার প্রতিবাদে রোববার সারা দেশে আধাবেলা হরতাল করেবাম গণতান্ত্রিক জোট। বিএনপি ও তাদের কয়েকটি শরিক দলও সেই হরতালে সমর্থন দেয়।

সাম্প্রতিক চীন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এলে একজন সাংবাদিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং এর প্রতিবাদে আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করেন।

জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের আগে ঠিক করতে হবে, তাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না।

“আমরা যদি দেশের উন্নতি করতে চাই, এই এনার্জি একটা বিষয়। আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংয়লাদেশের জিডিপি কতটুকু বেড়েছে? আর আমরা এখন জিডিপি ৮.১ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ আমরা এনার্জির ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ আমদানি বাড়াতে পারলেও বাংলাদেশকে গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। আর এলএনজি আমদানির জন্য খরচও বেশি পড়ছে।

“এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেখানে দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, এটা যদি না বাড়ানো হয়, তাহলে আপনাদের কাছে দুটো পথ আছে। হয় আমরা এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়ে এনার্জির ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলব, তাতে উন্নতি হবে না।

“আর যদি সত্যিই অর্থনৈতিক উন্নতি চান, … তো এটা তো মেনে নিতেই হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পায়ন করতে হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হলে, সার উৎপাদন করতে হলে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ হতে হলে সরকারকে এলএনজি আমদানি করতেই হবে।

“এলএনজি আমদানি করতে আমার কত টাকা খরচ হয়, সেই হিসাবটাতো আগে জানতে হবে। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে আমাদের খরচ পড়ে ৬১.১২ টাকা। সেটা আমি দিচ্ছি ৯.৮০ টাকায়।”

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করতে গিয়ে যারা ভারতে দাম কমানোর প্রসঙ্গ তোলেন- তাদের উদ্দেশে দুই দেশের গ্যাসের দামের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ভারতে প্রতি ঘণমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালীতে স্থানভেদে ৩০ থেকে ৩৭ টাকা, শিল্পে ৪০ থেকে ৪২ টাকা, সিএনজি ৪৪ টাকা আর বাণিজ্যিকে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা।

আর বাংলাদেশে  প্রতি ঘণমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালীতে ১২.৬০ টাকা, শিল্পে ১০.৭০ টাকা সিএনজি ৪৩ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ২৩ টাকা।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এলএনজি নিয়ে এসে যেটা ৬১.১২ টাকা, সেটা আমরা দিচ্ছি ৯.৮০ টাকায়। তারপরেও আন্দোলন!

“আন্দোলনে একটা মজার বিষয় আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে এক সুরে, এই তো? ভালো।”

চলতি অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখান থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১০ শতাংশে এ নিয়ে যাব। আমার এনার্জি লাগবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ লাগবে।

“এখন লোডশেডিং নেই, সবাই বেশ আরাম আয়েশে আছে বলেই ভুলে গেছে অতীতের কথা। দশ বছর আগে কী অবস্থা ছিল?”

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ অনুষ্ঠানেও বলেন, ২০০০ সালে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে তিনি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। তার ভাষায়, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সেবার ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে’ ক্ষমতায় আসেন।

সেই বিএনপি সরকারের সময় ভারতকে পাইপ লাইন দিয়ে মিয়ানমার থেকে গ্যাস আনার সুযোগ না দেওয়াও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে মন্তব্য করেন আজকের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমি থাকলে কী করতাম? পাইপ লাইনে তো গ্যাস নিতে দিতামই, আমি আমার ভাগটা রেখে দিতাম… যে আমাকে দিয়ে তারপর নিতে হবে।

“তখন যদি মিয়ানমার থেকে পাইপ লাইনে গ্যাস আনতে পারতাম, আর অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে আমাদের এখন এলএনজি আমদানি না করলেও চলত। কারণ সেখানে প্রচুর গ্যাসের রিজার্ভ আছে।”

সেই গ্যাস এখন পাইপলাইনে করেই চীনে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের কতগুলি বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব যদি ভুল করে, বা সরকার যদি ভুল করে, তার খেসারত জনগণকে দিতে হয়।”

এখন যে পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে, তারপরও বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্দোলন যেহেতু করেছি, তাহলে একটা কাজ করি, যে দামে কিনব, সেই দামে বেচব। ৯টাকার বদলে ৬১ টাকা দরে বেচব।”

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে হরতাল হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে সরকারপ্রধান বলেন, “সমস্ত ট্যাক্স মাফ করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের কাছে যাতে সহজলভ্য হয়, আমি সেই ব্যবস্থাটা করেছি। তারপরও উনারা হরতাল ডাকেন, আন্দোলন করেন।

“খুব ভালো, বহুদিন পর হরতাল পেলাম তো, পরিবেশের জন্য ভালো, ধন্যবাদ।”