সিনহা হত্যা মামলা

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রকাশিত: ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২০
সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। ফাইল ছবি

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে এসব তথ্য।

বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এ তথ্য জানান।

  • সব আলামত বুঝে পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা

  • শিপ্রা ও সিফাতের বাকি ২৯টি ডিভাইস নেয়া হবে আজ

  • টেকনাফ থানার ২টি সিসিটিভি ক্যামেরার একটির ডিভাইস নষ্ট, অন্যটি পাওয়া যাচ্ছে না

  • সাত আসামির রিমান্ড শেষ হচ্ছে আজ

  • শিপ্রার মামলা আমলে নেয়নি কক্সবাজার সদর মডেল থানা, রামু থানা অথবা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার পরামর্শ

কক্সবাজারে র‌্যাব-১৫ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, র‌্যাবের হাতে থাকা সিনহা হত্যা মামলার সব আলামত বুঝে পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

পাশাপাশি আদালতের আদেশক্রমে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (আজ) রামু থানা থেকে শিপ্রা ও সিফাতের বাকি ২৯টি ডিভাইস বুঝে নেয়া হবে।

লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ আরও জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জকে ২৫ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত থানার সিসিটিভি ক্যামরার ফুটেজ প্রদানে লিখিত আবেদন করেছিলেন।

ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টেকনাফ থানার ওসি জানিয়েছেন- থানায় ২টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। এর মধ্যে একটির ডিভাইস নষ্ট, অন্যটির ডিভাইস পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের দায়ের করা মামলায় ৯ পুলিশকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে।

ওই মামলায় বর্তমানে আদালতের মাধ্যমে বরখাস্ত ৭ পুলিশ সদস্য র‌্যাবের রিমান্ডে রয়েছেন। বাকি ২ পুলিশ সদস্যের পরিচয় ও তথ্য প্রদান করতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজারের পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

সিনহা হত্যাকাণ্ডের সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে পেশাদায়িত্ব নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এই স্পর্শকাতর মামলাটি তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার এই পরিচালক।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, র‌্যাবের কাছে রিমান্ডে থাকা ৪ পুলিশ সদস্যসহ ৭ জনের রিমান্ড আগামীকাল (আজ) শেষ হচ্ছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।

যদি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে যে কারও রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করবেন।

৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।

সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের করা হত্যা মামলায় উল্লিখিত সাতজনসহ ১৩ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এর মধ্যে র‌্যাব হেফাজতে রেখে চাকরি থেকে বরখাস্ত টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপসহ ১০ আসামির জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বাকি তিনজন (এপিবিএনের বরখাস্ত সদস্য) কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন।

কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় বুধবার পর্যন্ত কারাগারে এসেছে ১৩ আসামি।

এর মধ্যে ৭ জন কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্য, ৩ জন এপিবিএনের পুলিশ সদস্য ও ৩ জন পুলিশের দায়েরকৃত মামলার সাক্ষী এবং সিনহা হত্যা মামলার আসামি।

তিনি আরও বলেন, উল্লিখিত ১৩ জনের মধ্যে শুক্রবার থেকে ৭ দিনের রিমান্ডে র‌্যাব হেফাজতে যারা আছেন, তারা হলেন : এএসআই লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল- সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন এবং নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।

পাশাপাশি মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কারাগার থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৭ দিনের রিমান্ডে র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে গেছেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত।

এদিকে ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাত মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে তাদের আইনজীবী নিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় যান। এ সময় মামলার এজাহারটি আমলে নেয়নি কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ খায়রুজ্জামান বলেন, যে কোনো ব্যক্তি মামলা করার অধিকার সংরক্ষণ করেন।

তবে ঘটনাস্থল কক্সবাজার সদর মডেল থানার আওতাধীন না হওয়ায় মামলাটি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি ঘটনাস্থলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ট্রাইব্যুনালে ইচ্ছে করলে মামলার বাদী এজাহার দায়ের করতে পারবেন।

শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু বলেন, নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে পুলিশ আটক করার পর তার ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভসহ বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে যায় পুলিশ।

এগুলো থেকে শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও আপত্তিকরভাবে এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যক্তিচরিত্র হনন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করায় শিপ্রা দেবনাথের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।

তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় মামলা করতে এলে ওসি মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান ঘটনাস্থল হিমছড়ি হওয়ায় রামু থানা ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলার পরামর্শ দিয়েছেন।

আইনজীবী মাহাবুবুল আলম টিপু বলেন, দু’জনকে চিহ্নিত করে দেড়শ’ জনকে আসামি করে এজাহার তৈরি করা হয়েছে।

তার মধ্যে চিহ্নিত ফেসবুক আইডি পিবিআই পুলিশ ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। -যুগান্তর