আরও একদিন বাড়ল ইজতেমা

প্রকাশিত: ৭:৪৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা। ফাইল ছবি

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেছেন, বিশ্ব ইজতেমা আরও একদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে তিনদিনের পরিবর্তে চারদিনে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা।

মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এসব কথা জানান।

শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, প্রথম দুইদিন ইজতেমা পরিচালনা করবেন মাওলানা জুবায়ের এবং শেষের দুই দিন ইজতেমা পরিচালনা করবেন সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত তাবলিগের দু’পক্ষের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত করেন।

এদিন মন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছর দুই পর্বে ভাগ করে দেশের ৬৪ জেলার মানুষের জন্য ইজতেমার ব্যবস্থা করা হলেও এবার এক পর্বেই এ সম্মিলনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তাবলিগের দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে মাওলানা জুবায়েরুল হাসান, মাওলানা ওমর ফারুক, সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম, খান শাহাবুদ্দিন নাসিম এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব আমির দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দীন মারকাজের বিরোধিতা করছেন পাকিস্থানের তাবলিগি নেতৃবৃন্দ। তাই তাবলিগের মূল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিজামুদ্দীন মারকাজের সমান ক্ষমতা দাবি করে আলমি শুরা গঠন করে রাইভেন্ড মার্কাজ।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশদারিত্বের বিবাদে দিল্লি-লাহোর জড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়েই এর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে তাবলিগ জামায়াতের প্রধানকেন্দ্র কাকরাইল মসজিদেও ছড়িয়ে পড়ে এ বিভক্তি।

১১ জন শুরা সদস্যের মাঝে ছয়জন নিজামুদ্দীনের পক্ষে থাকলেও বাকি পাঁচজন আলমি শুরার পক্ষে অবস্থান নেন। এ অংশের বিরোধিতায় বিগত বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ ও নিজামুদ্দীনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ এসেও ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ইজতেমায় অংশ না নিয়েই মাওলানা সাদকে ঢাকা ছাড়তে হয়।

পরে কাকরাইল মসজিদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুরব্বিদের উপস্থিতিতে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর তিন চিল্লার সাথীদের জোড় এবং ১১, ১২, ও ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেন।

এর বিরোধিতা করে ডিসেম্বরের ৭ থেকে ১১ জোড় এবং জানুয়ারির ১৮, ১৯ ও ২০ ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করে অপর পক্ষ। এরপর দু’পক্ষের কোন্দল চলতে থাকলে এ বছরের জানুয়ারিতে নির্ধারিত বিশ্ব ইজতেমা নির্বাচনের আগে স্থগিত করা হয়। কিন্তু তার মধ্যেই সাদপন্থীরা ডিসেম্বরের শুরুতে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার ঘোষণা দিলে দেওবন্দপন্থীরা টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ দখল করে পাহারা বসায়।

১ ডিসেম্বর ভোর থেকে সা’দের অনুসারী শত শত মানুষ টঙ্গীর পথে রওনা হলে পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে দু’পক্ষের লোকজন বাঁশ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে পড়ে প্রাণ যায় সত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধের, দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে দু’পক্ষের অনুসারীদের বের করে দিয়ে ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তাবলিগ জামাতের ইতিহাসে এ প্রথম ইজতেমা ও জোড়ের তারিখ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দ্ব নিরসন করতেই দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।