আম্ফানে লন্ডভন্ড কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ

প্রকাশিত: ২:২৩ পূর্বাহ্ণ, মে ২১, ২০২০
ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে তছনছ হয়ে পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি রাজ্যটিতে আঘাত হানে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া দফতর। তখন এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৮৫ কিলোমিটার।

রাত ৮টার দিকে কলকাতায় আঘাত হানা সেই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার। ফলে লন্ডভন্ড পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কলকাতাসহ উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে। এছাড়া হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের অবস্থাও ভয়াবহ বলে জানাচ্ছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

হাজার হাজার বাড়ি এবং গাছপালা ভাঙার খবর পাওয়া গেছে। তবে বাস্তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এর অনেক গুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবশেষ খবরে কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে ৩ জন মারা গেছে কলকাতায়।

কলকাতা পুলিশ সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কলকাতায় এখনও পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে তালতলা এলাকায় একজন মারা গেছেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। এছাড়া রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকায় বাড়ির উপর গাছ ভেঙ্গে প্রাণ হারিয়েছে মা ও ছেলে।

দিঘায় ভেঙে পড়া গাছ সরাচ্ছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

গোটা রাজ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে হাজার হাজার কাঁচা বাড়ি, জমির ফসল। উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। মোবাইল টাওয়ার। ভেঙে গেছে বহু পুরোনো বাড়িঘর। ভেঙেছে সুন্দরবন অঞ্চলের বহু নদীর বাঁধ। প্লাবিত হয়েছে আশপাশের গ্রাম। মারা গেছে বহু গবাদিপশু।

বুধবার দুপুর ৩টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির স্থলভূমিতে আঘাত হানার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আম্ফান। ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সন্ধ্যা ৬টার দিকে অর্ধেকটা ঢুকে পড়ে স্থলভাগে।

রাজ্যটিরে জেলগুলো থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি উড়ে গেছে চাল। ভেঙে পড়েছে গাছপালা। উপকূল এলাকায় সমুদ্রে বেড়েছে জলোচ্ছ্বাস। আম্ফানের দাপট বিকেলের পর থেকে তা আরও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সর্বত্র ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ছিল বৃষ্টি। ঝড়ের আঘাতে ঘড়বাড়ি ভাঙার পাশাপাশি গাছপালা উপড়ে যায়। ভেঙে যায় জেটিও। সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয় উপকূলীয় এলাকায়। সকাল থেকেই ছিল সমুদ্র উত্তাল। প্রবল জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়। অনেক স্থানে বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

দুই চব্বিশ পরগণা শেষ এবং কলকাতা একেবারে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, গোটা ধ্বংসের চিত্র বুঝতে ১০ থেকে ১২ দিন লেগে যাবে। একদিনে এই ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

আম্ফানের তাণ্ডবের পর বুধবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ১০ থেকে ১২ জনের মতো মানুষের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতি লাখ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদেরকে সবকিছুই পুনর্নির্মাণ করতে হবে।