সারা দেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ছক

প্রকাশিত: ১২:১৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮

আগামী ২৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিন দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। এই তিন দিন টার্গেট করেই নিরাপত্তার চূড়ান্ত ছক আঁকা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে গুরুত্বপূর্ণ এই ৩ দিনে যে কোনো ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আনসারসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সব বাহিনীর সদস্যরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দিক বিবেচনায় অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। সব রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশের পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মেট্টোপলিটন এলাকার পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। সবাইকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সারা দেশের নির্বাচনী পরিবেশে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে মনিটরিং করা হবে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কর্মকর্তারা আরো জানান, মূলত ২৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিন টার্গেট করে নিরাপত্তা ছক চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। এ তিন দিন দেশের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা কঠোর নজরদারির মধ্যে রেখে নির্বাচনী সহিংসতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে এবং ভোটগ্রহণের আগে ও পরে কেউ যেন শান্তি শৃঙ্খলা ও জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক আছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বশস্ত্র বাহিনী, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি টিম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আচরণ বিধি লঙ্ঘন, অপ্রীতিকর ও অপরাধমূলক ঘটনা প্রতিরোধের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৬৩৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এজন্য ৬৩৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। ভোটের দিন এবং ভোটের আগে ও পরের দিনসহ তিনদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা জোরদার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও গোয়েন্দাদের তালিকা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ আসন ও ভোটকেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকধারী সদস্য, গোয়েন্দা পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা বেশি থাকবে। এই তিনদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নিবিঘ্নে ভোটগ্রহণ, প্রার্থী ও প্রতিপক্ষের মধ্যে সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম রোধ এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নেবেন। এ ছাড়া এই তিনদিন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে সারা দেশে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করবে।
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনের আগের ও পরের দিনের নিরাপত্তার ব্যাপারেও নিরাপত্তা পরিকল্পনা পুলিশের রয়েছে। এই তিনদিন পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের টহল, অবস্থান গ্রহণ ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। এসময় গোয়েন্দা নজরদারি আরো বাড়ানো হবে। র‌্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, নির্বাচনী নিরাপত্তায় র‌্যাবের ৯ হাজারের বেশি র‌্যাব সদস্য সরাসরি মাঠে থাকবে। এ ছাড়া রিজার্ভ ফোর্স, ডগ স্কোয়ার্ড, বোমা ডিসপোজেবল টিম, প্রয়োজনে দ্রুত মুভমেন্টের জন্য হেলিকপ্টার প্রস্তুত থাকবে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে র‌্যাবের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি আরো জোরদার হবে।