শপথ নিলেন ২৮৯ সংসদ সদস্য, ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকার অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০১৯

ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের আইনসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সাংসদরা। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৯ জন সংসদ সদস্য শপথ নেন।

বৃহস্পতিবার অনাড়ম্বর পরিবেশে বেলা ১১টার পর সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমে দশম সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে নিজের শপথ নেন।

এবারের নির্বাচনেও রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি। স্পিকার শপথ বাক্য পাঠ করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাঁড়িয়ে হাততালি দেন। পরে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথপত্রে সই করেন।

এরপর তিনি অন্যদের শপথ পড়ান। প্রথমে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক দলের কয়েকজন নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পড়ান। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্যরা নিজ নিজ নাম উচ্চারণ করে স্পিকারের সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকেন- ‘সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব; এবং সংসদ সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দেব না।’ শপথবাক্য পাঠ করার পর সদস্যরা শপথপত্রে নিজেদের আসনের নাম লিখে সই করেন। একাদশ জাতীয় সংসদের ২৮৯ জন নির্বাচিত সদস্য প্রথম দিন শপথ নেন।

শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান। শপথ পড়ানো শেষে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে শুভেচ্ছার ফুল তুলে দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রথম দফার শপথে প্রথম সারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডানপাশে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর বাঁ পাশে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম, ড. আবদুর রাজ্জাক।

প্রথম দফাতেই ২৫০ জনের বেশি নবনির্বাচিত সাংসদ শপথ পাঠ করেন, যাদের মধ্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাসদের মাঈন উদ্দীন খান বাদলও ছিলেন। তবে বিএনপি ও তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতদের কেউ এদিন শপথ নেননি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নেতৃত্বে প্রথম দফা শপথের পর দ্বিতীয় দফায় শপথ নেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, স্বতন্ত্র ও মহাজোটের কয়েকজন প্রার্থী। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং স্বতন্ত্র সদস্য নিক্সন চৌধুরী ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

এরপর দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে শপথ নেন জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত ২১ জন সংসদ সদস্য। শারীরিক অসুস্থতার কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এদিন শপথ নেননি। তিনি পরবর্তীকালে স্পিকারের কক্ষে আলাদাভাবে শপথ নেবেন বলে সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া বিদেশে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নেয়ার জন্য সময় চেয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে স্পিকার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘উনি দেশে ফিরে আসার পর শপথ নিতে চান। এমনিতেই ৯০ দিন সময় উনি পাবেন।’

কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত শপথ ঘিরে সংসদ ভবনজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ওই এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। সংসদ ভবনে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সংসদ ভবনের অভ্যন্তরসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বাহারি রঙের ফুলের টব সারি সারি বসিয়ে সংসদ ভবনকে নতুনভাবে সাজানো হয়। সকাল থেকে সংসদের মূল ভবনের প্রধান গেট থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সামনে নবনির্বাচিত সদস্যদের স্বাগত জানাতে দেখা যায় সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

সংসদ সচিবালয় জানায়, নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী নির্বাচিত ২৯৮ জন সদস্যের মধ্যে চারটি ধাপে ২৮৯ জন শপথ নিয়েছেন। অসুস্থতার কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নিতে পারেননি। আর নির্বাচিত হয়েও শপথ নেননি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাতজন সংসদ সদস্য। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে বা স্পিকারকে অবহিত না করলে সদস্যপদ খারিজ হবে।

গত ৩০ ডিসেম্বর দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের আগে এক প্রার্থীর মৃত্যু এবং নির্বাচনের দিন গোলযোগের কারণে একটি আসন স্থগিত রেখে ওইদিন রাতেই ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ২৫৭টি আসনে জয়ী হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর জোটগতভাবে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৮টি। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর বিপরীতে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র সাতটি আসনে জয়ী হয়। দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করে এবার ২২টি আসনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জায়গা করে নেয় সংসদে।