মৃতদেহের কফিন নিয়ে কেন নাচেন আফ্রিকার যুবকরা?

প্রকাশিত: ৬:০০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২০
ছবি: সংগৃহীত

সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করতে করতে হয়তো কখনও চোখে পড়েছে আপনার এই দৃশ্য।কফিন কাঁধে করে রীতিমতো নাচছেন কিছু আফ্রিকান যুবক! সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ডিং লিস্টের উপর দিকেই থাকে এই কফিন-ডান্স। অনেক সময়েই হয়তো মনে হয়, আর পাঁচটা ভাইরাল ভিডিওর মতোই মজা করে বানানো একটি নাটকীয় দৃশ্য এটি। কিন্তু তা মোটেও সত্যি নয়। আদতে আফ্রিকা মহাদেশের ঘানা অঞ্চলের এক প্রাচীন প্রথা এটি। বানানো বা হাসির জিনিস নয় একেবারেই।

২০১৫ সালে ইউটিউবের একটি চ্যানেলে প্রথম এই ধরনের ভিডিও নজরে আসে। ওই ইউটিউব চ্যানেলের মালিক তাঁর এক আত্মীয়ের শেষযাত্রার ভিডিও ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রকাশ করেন এবং তার পরেই তা সকলের নজর কাড়ে। চার মিলিয়নের বেশি মানুষ দেখেছিলেন সেই ভিডিও। আপনিও দেখুন।

এরপর ২০১৭ সালে একটি আন্তর্জাতিক সংবা মাধ্যমের পক্ষ থেকে ঘানার এই প্রাচীন প্রথাটি সম্পর্কে স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করা হয় বিবিসি-র তরফে। সেখানেই প্রথম জানা যায়, এটি আসলে সেই দেশের একটি বহু প্রাচীন প্রথা। এই শববাহী হিসেবে যাঁরা নাচ করেন তাঁরা সকলেই পেশাদার। শেষযাত্রায় নাচাটাই তাঁদের পেশা। তাঁদের বলা হয় “ডান্সিং পলবিয়ারার”।

ডান্সিং পলবিয়ারারদের এই বিষয়টা নতুন করে আবার নেটিজেনদের নজর কাড়ে, যখন গত বছরের মে মাসে এক যুবক তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে এরকমই একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেটাই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে তখন, হয়ে যায় ভাইরাল। নেটিজেনদের কাছে রীতিমতো বিনোদন হয়ে ওঠে এই ভিডিও। বিভিন্ন মজার মজার ভিডিও, মিম তৈরি হতে শুরু হয় শুধু এই নাচকে কেন্দ্র করে।

এখন আবার ফিরে এসেছে এই ভিডিও। করোনা আতঙ্কের জেরে গোটা দুনিয়া যখন সন্ত্রস্ত, চিকিৎসার উপায় অজানা, প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না বেরোনোর নিদান দেশে দেশে, তখন সেই বার্তাকেই খানিক মজার ছলে দেখানো হয়েছে বেশ কিছু মিমে, এই ভাইরাল ডান্স-ভিডিওকে কেন্দ্র করেই।

তবে আসল সত্যিটা হল, এই নাচগানের রীতি আপাতদৃষ্টিতে মজার বলে মনে হলেও, এর ভেতরে লুকিয়ে আছে একটি গভীর জীবনদর্শন। এটি নিছক আমোদপ্রমোদ মুলক কোনও অনুষ্ঠান নয়। তাঁরা বিশ্বাস করেন, একজন মানুষ তাঁর জীবদ্দশায় প্রচুর দুঃখ-কষ্ট নিয়েই বেড়ে ওঠে, দরিদ্র দেশে তো এমনটাই দস্তুর! তাই এই প্রাচীন প্রথার মধ্যে দিয়ে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিজনেরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের প্রিয়জনের বিদায়যাত্রাকে খানিক আনন্দদায়ক করে তোলা যেতে পারে।

তাঁরা বিশ্বাস করেন, জীবনের সর্বশেষ পথটুকু নাচগানের মধ্যে দিয়ে আনন্দ করতে করতে গেলে, জীবিতকালে পাওয়া দুঃখ-কষ্টের বোঝা খানিক ম্লান হতে পারে পরজন্মে।