মহাজোট এগিয়ে শিক্ষা-সম্পদে, মামলা-ঋণে এগিয়ে ঐক্যফ্রন্ট: সুজন

প্রকাশিত: ১১:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
ডেস্ক রিপোর্ট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থীরা শিক্ষাগত যোগ্যতা, বার্ষিক আয় ও সম্পদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট প্রার্থীরা এগিয়ে ঋণ ও মামলায়। বাকি দলসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবদিক থেকেই পিছিয়ে।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্লেষণের তথ্য এবং ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো ১২ হাজারের বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পিছিয়ে ছিল না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৫ প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করে। ১ হাজার ৮৭১ জন চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৪২ প্রার্থীর হলফনামায় দেয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, মামলা, বার্ষিক আয়, সম্পদ, দায়-দেনা বা ঋণ, আয়করের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

এতে আওয়ামী লীগের ২৯৯ জন, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের ২৮৭ জন, বাম গণতান্ত্রিক জোটের ১৪৭ জন, ইসলামী আন্দোলনের ২৯৭ জন, অন্য রাজনৈতিক দলের ৬৯৪ জন ও স্বতন্ত্র ১১৮ জন প্রার্থী আছে।

সুজন বলছে, শিক্ষাগত যোগ্যতায় মহাজোট প্রার্থীদের ৮০ দশমিক ৯৩ শতাংশ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস ২৪২ জন। এদিক থেকে একটু পিছিয়ে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা। এই জোটের ৮০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস ২৩০ জন। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে না পারার সংখ্যায়ও ঐক্যফ্রন্ট এগিয়ে। সামগ্রিকভাবে এবার স্নাতকোত্তর প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি, ৩৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।

অন্যদিকে ভোটে অংশ নেয়া ৫২ দশমিক ১৭ শতাংশই ব্যবসায়ী। ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ী ১৮৪ জন, ৬৪ দশমিক ১১ শতাংশ। আর মহাজোটের প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ী ১৮০ জন, ৬০ দশমিক ২০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের পরেই চাকরিজীবীদের আধিক্য। মোট প্রার্থীদের ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ চাকরিজীবী, সংখ্যায় ২৯০ জন। গৃহিণী ১৬ জন, কৃষিজীবী ১৩০ জন, আইনজীবী ১৫৭ জন।

মামলা বেশি ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের নামে, ২৮৭ প্রার্থীর মধ্যে ১৭৭ জনের নামেই মামলা আছে। আর মহাজোটের মাত্র ২০ প্রার্থীর নামে মামলা আছে। ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা আবার হত্যা মামলার (৩০২ ধারায়) আসামিও, এই সংখ্যা ৪১ জন। তবে মহাজোটের মাত্র ৩ প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা আছে।

তথ্য উপস্থাপনের একপর্যায়ে বদিউল আলম বলেন, ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এত এত মামলা রয়েছে, যেগুলো একত্রিত করতে অনেক সময় লেগেছে। এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলাও রয়েছে। এ কারণে হলফনামার তথ্য দিতে দেরি হয়েছে।

কোটি টাকার বেশি আয় রয়েছে মহাজোটের ৭৮ প্রার্থীর। আর ঐক্যফ্রন্টের ৩৪ প্রার্থীর। মহাজোট প্রার্থীদের মধ্যে ৮০ দশমিক ৬০ ভাগের সম্পদ কোটি টাকার ওপরে, ২৪১ জন। ঐক্যফ্রন্টের ৫২ দশমিক ২৭ শতাংশ, ১৫০ জন। অন্যদিকে দায়-দেনা ও ঋণ বেশি ঐক্যজোট প্রার্থীদের। কোটি টাকার বেশি ঋণ আছে ৩৫ জনের। মহাজোটের ৩১ প্রার্থীর দায়-দেনা ও ঋণ কোটি টাকার বেশি। বাম গণতান্ত্রিক জোট প্রার্থীদের ঋণ সবচেয়ে কম।

তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের আয়কর দেয়ার প্রবণতা কম। এক হাজার ৮৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৭১০ জন আয়কর দেন, যা ৩৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে ন্যূনতম করদাতার সংখ্যাই বেশি। বছরে ৫ হাজার টাকা কর দেন ১৭২ জন। এক লাখ টাকার বেশি আয়কর দেন ২৮৮ জন। অবশ্য সবচেয়ে বেশি আয়কর দিয়েছে মহাজোটের প্রার্থীরা, ১৯৯ জন।

বিশ্লেষণের তথ্য উপস্থাপন করে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের দিক বিবেচনা করলে একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে সুস্থ প্রতিযোগিতার যে অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন, তা এখনও সৃষ্টি হয়নি। বরং দিন দিন আরও প্রতিকূল হয়ে যাচ্ছে। দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হামলা, গ্রেফতার-হয়রানির কারণে অনেক বিরোধী প্রার্থী প্রচার চালাতে পারছেন না। দৃশ্যমান না হলেও অনেক বিরোধী প্রার্থী অবরুদ্ধ।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, হলফনামায় অনেক প্রার্থী মিথ্যা ও ভুল তথ্য দেয়। নির্বাচন কমিশনের সেগুলো যাচাই-বাছাই করা উচিত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হলফনামা যাচাই-বাছাইয়ের ঘোষণা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে হলফনামা যাচাই-বাচাই করলে ‘বসন্তের কোকিলদের’ নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যাবে। নির্বাচনের পরে হলফনামায় ভুল পেলে নির্বাচন বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই অনেক জায়গায় বিরোধী দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সবাই জানতে চায়, ভোট সঠিক হবে তো? ভোট কেন্দ্রে যেতে পারব তো? ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারব তো?

তিনি বলেন, আয়কর রিটার্ন জমা দেয়নি বা সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার কথা ছিল। এ ধরনের অনেক প্রার্থী নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে এ বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেনি।