ভ্যাট আইনে কাঠামোগত বড় পরিবর্তন আসছে, কমবে আগাম কর

প্রকাশিত: ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ, মে ২৫, ২০২১

ভ্যাট আইন ব্যবসাবান্ধব ও যুগোপযোগী করতে আগামী অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেটে আইনটির কাঠামোগত বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের আগাম কর (এটি) হার কমানো হবে আগামী অর্থবছরে। পাশাপাশি রিফান্ড জটিলতার কারণে কয়েকটি শিল্পকে আগাম কর থেকে অব্যাহতিও দেয়া হতে পারে।

এছাড়া ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা ও সরল সুদ দুটোতেই ছাড় দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশীয় ইলেট্রনিক্স শিল্পের স্বার্থে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে কার্যকর হওয়া নতুন ভ্যাট আইন আগাম কর হার ছিল ৫ শতাংশ। চলতি বাজেটে স্থানীয় শিল্পকে সুবিধা দিতে আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের ওপর আগাম কর কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়।

পুরাতন আইনে আগাম করকে অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট বা এটিভি বলা হত। তখন মোটা দাগে, শুধু বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের এটিভি দিতে হত। উৎপাদনমুখী শিল্প এটিভির আওতার বাইরে ছিল।

কিন্তু নতুন আইনে কয়েকটি ছাড়া সবধরনের শিল্পকে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর দিতে হচ্ছে। এ কর ফেরত (রিফান্ড) দেয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় উদ্যোক্তারা সময়মতো সেটি পাচ্ছে না। এ নিয়ে শিল্প মালিকরা দীর্ঘদিন যাবৎ আপত্তি জানিয়ে আসছেন।

সম্প্রতি কর ব্যবস্থার ব্যাপক সমালোচনা করেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের করব্যবস্থা চূড়ান্ত রকমের ব্যবসা–অবান্ধব। এ কারণে ব্যবসা বন্ধ করেই দেয়া উচিত।

‘আমরা যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করি, আমরাকাল থেকে কান ধরে ছেড়ে দিতে চাই। লাভ হোক আর লোকসান, যা-ই হবে, কর দিয়েই যাবেন। যারা কর দেয় না, তারাই ভালো থাকবে। তারা আরও বড় বড় ব্যবসা করবে আর আমরা মরব। এই ধরনের ব্যবসার মধ্যে আর আমরা নেই। করব্যবস্থা ঠিক করেন। অন্যথায় বর্তমান ব্যবসাই থাকবে না, নতুন বিনিয়োগের তো প্রশ্নই ওঠে না।’

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাটের কমপ্লায়েন্স বাড়াতে আগাম কর প্রথা চালু করা হয়। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে জড়িত সব প্রতিষ্ঠান যেন ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে সেজন্য সব শিল্পকে আগাম করের আওতায় আনা হয়। কিন্তু যথাসময়ে রিফান্ড দিতে না পারায় পদ্ধতিটি সমালোচনার মুখে পড়েছে। এসব বিবেচনায় আগামী বাজেটে আগাম কর হার ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হচ্ছে।

পাশাপাশি অনেক খাতকে বাজেটে আগাম করের আওতায় বাইরে রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যেমন- ব্যবসায়ী পর্যায়ে মোবাইল ফোন সেট ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আগাম কর অব্যাহতি না দেয়ায় রিফান্ড সৃষ্টি হচ্ছে।

একইভাবে স্টিল স্ক্র্যাপ, শিপ স্ক্র্যাপ, রডের ওপর টনপ্রতি এক থেকে ২ হাজার টাকা সুনির্দিষ্ট ভ্যাট আরোপিত আছে। অথচ আমদানি পর্যায়ে আগাম কর রয়েছে এবং যথারীতি রিফান্ড সৃষ্টি হচ্ছে।

এছাড়া সিমেন্ট, বেভারেজ ও সিরামিক খাতের মতো উৎপাদন পর্যায়ে যেসব শিল্পে মূল্য সংযোজনের হার ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশের কম সেসব ক্ষেত্রে রিফান্ড সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রদেয় ভ্যাট থাকে না। তাই আগামী বাজেটে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, মোবাইল ফোন, সিমেন্ট ও স্টিল শিল্পকে আগাম কর থেকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে।

অন্যদিকে ভ্যাট আইনে ফাঁকির জরিমানা ও সরল সুদ হার দুটোই কমানো হচ্ছে। বর্তমানে ভ্যাট ফাঁকির ক্ষেত্রে ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের দ্বিগুণ জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে। আগামী বাজেটে এটি কমিয়ে ফাঁকির সমপরিমাণ জরিমানার বিধান করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এছাড়া সময়মতো ভ্যাট না দেয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সরল সুদের বিধান রয়েছে। এটি বাজেটে এক শতাংশ করা হতে পারে।

এছাড়া দেশীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্পের (এসি-ফ্রিজ) ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন প্রজ্ঞাপনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাজেটে শর্তসাপেক্ষে এ সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত করা হতে পারে।

২০১০ সাল থেকে রেফ্রিজারেটর ও মোটরসাইকেল উৎপাদন শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে আসছে সরকার। চলতি বাজেটে মোটরসাইকেলকে এ তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। বর্তমানে শুধু এসি-ফ্রিজ এবং কম্প্রোসার উৎপাদন শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে।