ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা সংশয়: সিজিএসের সেমিনারে বিশিষ্টজনরা

প্রকাশিত: ২:৩৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮
ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত উদ্বেগজনক। ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা সেই প্রশ্নও অবান্তর নয়।

তবে একটি ভালো নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যম প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যম এক থাকলে তিন দিনের মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।

রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।

এতে অধিকাংশ বক্তা নির্বাচনকালে গণমাধ্যমের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট সংকট ও বিদ্যমান পরিবেশ রাজনীতিবিদদেরই সৃষ্টি। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ রাজনীতিবিদদেরই তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যার ওপর মানুষ আস্থা রাখতে পারে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইংরেজি দৈনিক নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবির। সিজিএস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম আতাউর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, জি-৯-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত ও দৈনিক প্রথম আলোর কনসালটেন্ট (কনটেন্ট) আয়শা কবির।

আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ভারতীয় সাংবাদিক এবং সাউথ এশিয়ান মনিটরের নির্বাহী সম্পাদক চন্দন নন্দী, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, সুপ্রিমকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার এবং সাবেক জজ ইকতেদার আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান, সিজিএস ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

মূল প্রবন্ধে নুরুল কবির বলেন, মানুষের ভোট দেয়ার পরিস্থিতি এ মুহূর্তে হুমকির মুখে। যে পরিস্থিতি আছে তা কারও জন্য মঙ্গলজনক নয়। পত্রিকার সূত্র ধরে বলেন, নির্বাচন হবে কিনা- এখনও সংশয় আছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাজ ভালো লোক খুঁজে বের করা। কিন্তু সার্চ কমিটি করে অত্যন্ত অনুগত ও মাখন দিয়ে মেরুদণ্ড তৈরি লোকদের কষ্ট করে খুঁজে বের এনে কমিশনে বসানো হয়। বেছে বেছে অফিসারদেরকে ওএসডি করা হয় এবং অনুগতদের দায়িত্ব দেয়া হয়।

এই নির্বাচনে কোন পেশার কত শতাংশ প্রার্থী প্রতিযোগিতা করছে তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। এতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ব্যবসায়ী, ৫৫ শতাংশ। ১১ শতাংশ আইনজীবী, ৭ শতাংশ কৃষি, ৬ শতাংশ বিভিন্ন পেশার, ৪ শতাংশ রাজনীতিবিদ এবং ১৭ শতাংশ নানা পেশার মানুষ রয়েছেন। এই নির্বাচনে এখনও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি বা কোনো ব্যবস্থা নেই।

আগামী দিনে সংঘর্ষ হবে না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ১৬ প্রার্থী কারাগারে। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ’ ব্যক্তি গ্রেফতার হচ্ছে। বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, যেনতেন নির্বাচন সংকট আরও গভীর করবে। এতে ভোটের টানওভারে অ্যাফেক্ট পড়বে। ভোটার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সরকারের নৈতিকতায় সংকট তৈরি করবে। সরকার নৈতিকতার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ নির্বাচনে জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা জোরদার হয়। এটা মানুষের ইচ্ছা। এখন মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন কি না। বাস্তবতা হচ্ছে এখন একপেশে মাঠ। বিরোধী দল অনুপস্থিত। গায়েবি মামলা অব্যাহত রয়েছে। পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আর্মি (সেনাবাহিনী) সব সময় লাগে। আর্মি ছাড়া ইলেকশন হবে না। তিনি বলেন, মিডিয়ার কর্র্মীদের প্রশিক্ষণ কম। কোনো কিছুর পটভূমি বুঝতে তাদের প্রশিক্ষণ দরকার। প্রফেসর ড. আতাউর রহমান বলেন, চারদিকে শুধু নৌকার শোডাউন দেখা যাচ্ছে। আমার ধারণা শেষ পর্যন্ত পঞ্চাশ পার্সেন্ট ভোটার ভোট কেন্দ্রে আসবে।

চন্দন নন্দী বলেন, র (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) যে বাংলাদেশের নির্বাচনে সংযুক্ত এটা এখন আর সিক্রেট (গোপন) না। মিডিয়ার ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, শুনে আসছি, জেনারেল জিয়া হত্যার অন্যতম আসামি মেজর মোজ্জাফর ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে কলকাতায় অবস্থান করছেন।

মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, মিডিয়া সেন্সরশিপে কাবু। সাংবাদিকরা যদি চান তিন দিনের মধ্যে এ পরিস্থিতি পাল্টিয়ে দিতে পারেন। সাংবাদিকদের আÍপরিচয় ঠিক না হলে কোনো কিছু ঠিক হবে না। মানবজমিন সম্পাদক বলেন, শুনছি মার্কিন পর্যবেক্ষকদের ভিসা দেয়া হয়নি। তারা আসতে পারছেন না। তারা আসতে চেয়েছিলেন। এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে উপায় খুঁজতে হবে।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ধীরে ধীরে আমরা অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছি। অনেকেই বলছে, ২৪ তারিখের পর সেনাবাহিনী নামবে। এই ২৪ তারিখের পর দেশ অন্ধকার হবে, নাকি আলোকিত হবে- সেটির জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কারণ পুলিশ ও প্রশাসন তো এক পক্ষ নিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, আমি যদি সেনাবাহিনীর সমর্থন করি তাহলে অনেকেই হয়তো বলবে আপনার দলের প্রধান সেনাবাহিনীর ছিল।

কিন্তু এটাও তো সত্য দেশে যতগুলো ভালো কাজ হয়েছে সব কাজের সঙ্গে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত ছিল। এটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন।

আয়শা কবির বলেন, আসলেই কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। দেশের মানুষ নিশ্চিন্তে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে চায়। সে অবস্থা দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ দেখা যাচ্ছে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেন। তিনি বলেন, কিছু কিছু মিডিয়া একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। জনগণের টাকায় চলা বিটিভি এখনও নিরপেক্ষ হতে পারেনি।