ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য: মামুনুল-বাবুনগরী-ফয়জুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

প্রকাশিত: ১২:২৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০২০

ভাস্কর্যের বিরোধিতার নামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার অভিযোগে অভিযোগে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মোহাম্মদ জোনায়েদ ওরফে জুনায়েদ বাবুনগরী ও সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলাটি করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বেলা ১১টার দিকে মামলা গ্রহণের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘আসামিরা ভিরু, মিথ্যুক, জ্ঞানপাপী, ধর্মের অপব্যবহারকারী, রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব বিনষ্টকারী বিদেশি জায়নবাদী শক্তির দালাল চক্র বটে। যারা তাদের অর্জিত জ্ঞানকে বাতিলের পথে পরিচালিত করে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার নিজেদেরকে ধর্মগুরু হিসাবে আখ্যা দিয়ে দেশের অগনিত শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি পবিত্র ধর্ম ইসলামের প্রতি অগাধ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তাদের সামনে এবং ফেসবুক-ইউটিউব মারফত অগনিত বাঙালি মুসলমানদের কাছে নিজেদের বক্তব্য, ওয়াজ নসিহত মাহফিলের নামে প্রচার করে পবিত্র ধর্ম ইসলামের মিথ্যা আজগুবি বর্ণনা দিয়ে ইসলাম, মহানবী (সঃ) ও মদিনা সনদকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে  অর্জিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানকে বিপরীত ও মুখােমুখি দাড় করে বিদেশি প্রপাগান্ডা বাস্তবায়নের হীন উদ্দেশ্যে নিজেদের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে চটকদার, বিদ্বেষপূর্ণ কাল্পনিক, উত্তেজনাকর ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাঙ্গালী মুসলমান সমাজের মধ্যে দেশের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান সম্পর্কে ঘৃণা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে যোগসাজশে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে।’

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়,  ‘আসামি মামুনুল হক গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোফখানা রোডের বিএমএ ভবনের মিলনায়তনে বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারেনা। এই মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তৌহিদী জনতা নিয়ে শাপলা চত্ত্বর কায়েম হবে।’

একইদিন আসামি সৈয়দ ফয়জুল করিম ধোলাইখালের নিকটে গেন্ডারিয়া নামক স্থানে তার নসিহত শুনতে আসা সাধারণ মুসলমানদের হাত উচু করে শপথ পড়িয়ে নেন যে, ‘ আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জেহাদ করব। রক্ত দিতে চাই না, দেওয়া শুরু করলে বন্ধ করব না। রাশিয়ার লেলিনের বাহাত্তর ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে আমি মনে করি শেখ সাহেবের এই মূর্তি আজকে হোক, কালকে হোক খুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে বলে সবাইকে শপথ পড়ান। আসামি মোহাম্মদ জোনায়েদ ওরফে জোনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারীতে বলেন, ‘মদিনা সনদে যদি দেশ চলে তাহলে কোন ভাস্কর্য থাকতে পারেনা।’ তিনি সরকারকে হুশিয়ারি করে বলেন, ‘ ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্ত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ঐ ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলবেন।’

অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘আসামিরা এরূপ ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা ও সুযোগ সুবিধা লাভের হীন উদ্দেশ্যে বিদেশী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে ধর্মের লেবাসে সাধারণ মুসলমানদের উস্কানি দিয়ে, ক্ষেপিয়া তুলে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে ঘৃণা ও শত্রুর ভাব সৃষ্টি করেছে। যার ফলশ্রুতিতে আসামিদের নির্দেশে মধুর ক্যান্টিনে অবস্থিত মধুদার ভাস্কর্য ও কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মিত ভাস্কর্যসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য ভাঙা হচ্ছে বিধায় এরূপ প্রচারণা ও উস্কানী রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তাই বাদী আদালতে এসে মামলা আবেদন করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।’

মামলার অভিযোগে বলা হয়, কিছুদিন আগে মৌলবাদী অপশক্তি মামুনুল হক ও ফয়জুল করিম কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যা দেশের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ।

এর আগে গত শনিবার মঞ্চের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে মামলা দায়েরের কথা জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, ভাস্কর্যের বিরোধিতার নামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটাক্ষ ও অবমাননা করে মামুনুল গংরা প্রকাশ্যে বড় বড় গলায় কথা বলছে। মৌলবাদী অপশক্তিরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাস্কর্য নিষিদ্ধ বলে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এরা ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্যের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দেশ ও জাতির সমূহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতের আঁধারে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় মাদরাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাস্উদ (রা.) মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯) ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০) এবং শিক্ষক আল-আমিন (২৭) ও ইউসুফ আলী (২৬)।

গ্রেপ্তার দুই মাদরাসাছাত্র পুলিশকে জানিয়েছেন, ইসলামি বক্তা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমের বয়ান শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন।