ভারত- চীনের সঙ্গে যেভাবে ভারসাম্য রক্ষা করছে আ’লীগ সরকার

প্রকাশিত: ৯:৫৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০১৯

বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন ভারত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এর পরেই পরেই চীন সরকার বাংলাদেশের খুব দ্রুতই প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায়।

এদিকে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত ও চীনের সঙ্গে ‘ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক’ বজায় রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চীন ও ভারত একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। এক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে অন্য দেশ বিড়াগভাজন হতে পারে। তবুও দেশ দু’টির সঙ্গে সমান তালে কীভাবে সম্পর্ক রাখছে শেখ হাসিনা সরকার এটা অনেকের কাছেই অজানা প্রশ্ন।

ভারত ও চীনের বাংলাদেশের প্রতি চাহিদা দুরকম। অনেকেই মনে করছেন ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা হওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

রাজনীতি ও কূটনীতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের সম্পর্ক রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে সম্পর্কটি পুরোপুরি অর্থনৈতিক।

তাদের মতে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকার ভারতকে অভূতপূর্ব সহায়তা করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে ইসলামি জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে সেটি যাতে ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্যও পদক্ষেপ নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে চীন পুরোপুরি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করছে বলে মনে করা হয়।

সেজন্য যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে, চীন তাদের সঙ্গেই কাজ করবে। এছাড়া যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার নানা ধরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেজন্য চীনও চাইছে শেখ হাসিনার সরকারই ক্ষমতায় থাকুক। কারণ তাতে প্রকল্পগুলো চলমান থাকবে এবং তাতে চীনের লাভ হবে।

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বাংলাদেশ সফর করে।

ওই সফরের সময় চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে ২৬টি নানা ধরণের চুক্তি এবং সমঝোতা হয়েছে।

দুদেশের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী চীন বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেবে। এর বেশিরভাগই অবকাঠামো খাতে।

এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার চীন সফরের পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ভিন্নমাত্রা নিয়েছে।

বর্তমানে চীন বাংলাদেশে পদ্মা সেতুসহ নানা অবকাঠামো প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

এছাড়া চীনের কাছ থেকে সাবমেরিনও ক্রয় করেছে বাংলাদেশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের চীনের সাথে সম্পর্কটা এখনও পর্যন্ত সামরিক দিকের পাশাপাশি মূল বিষয়টা হচ্ছে অর্থনৈতিক। এ জায়গাটাকে দিল্লী উদ্বেগের সঙ্গে দেখলেও শেষ পর্যন্ত কূটনীতিক আলাপ-আলোচনায় প্রিভেইল করাটা খুব ডিফিকাল্ট দিল্লীর জন্য।

উভয় দেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক হোসেন।

বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারত এবং চীন উভয়ের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু একপক্ষকে একাজ দেয়া হলে অন্যপক্ষ অখুশি হতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে কোনো পক্ষকেই এ কাজ দেয়া হয়নি। এমনটা বলছেন অনেক বিশ্লেষক।

২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন মুন্সি ফয়েজ আহমদ।

তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে গবেষণার মাধ্যমে সরকারকে সহায়তা করে করে প্রতিষ্ঠানটি।

মুন্সি ফয়েজ আহমদ, বাংলাদেশ যদি তার নিজের জাতীয় স্বার্থ খেয়াল রেখে কাজ করে, যার কাছ থেকে যে জিনিসটা ভালো পাওয়া যাবে। এগুলো করলে আমাদের যারা বন্ধু তারা কেউই বাঁধ সাধবে না। আমার ধারণা যে মোটামুটি সে জিনিসটাই সরকার করার চেষ্টা করছে।

তিনি মনে করেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শুধুই রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা-জনিত বিষয় নয়। এখানে অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িত আছে।

মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, চীন যদিও আমাদের ব্যবসায়িক সবচেয়ে বড় অংশীদার, কিন্তু ভারতের সঙ্গেও আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক কম নয়। তবে চীনের সঙ্গে ব্যবসার টোটাল সাইজটা ১৪-১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো।

অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা চীনের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ বলে উল্লেখ করেন সাবেক এ রাষ্ট্রদূত।

তবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা উঠলেই নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যদি বৈরিতা থাকে তাহলে আমরা কোনোভাবেই এগুতে পারব না।