বিতর্কিত ‘লাভ জিহাদ আইনে’ ভারতে গ্রেফতার ১০, সমালোচনা বাড়ছে

প্রকাশিত: ৭:১১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০২০

বিয়ের পরে নারীদের ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য করার অভিযোগে ১০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ‘লাভ জিহাদ’ নামে ভিনধর্মে বিয়েবিরোধী বিতর্কিত নতুন একটি আইনে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গত মাসে ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে উত্তরপ্রদেশ বাধ্য বা প্রতারণার মাধ্যমে ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে আইন পাস করে। কাউকে ধর্মান্তকরণ করতে বাধ্য করা কিংবা বিয়ের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হতে প্ররোচিত করলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এটা বিজেপি সরকারের মুসলিমবিরোধী এজেন্ডা।

আইনটিতে কোনো ধর্মের নাম না থাকলেও সমালোচকরা আইনটিকে মুসলিমবিদ্বেষী বলছে। দেশের হিন্দু নারীদের প্রেমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভ্রান্ত করে বিয়ের পর ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করে একে ‘প্রেমের মাধ্যমে জিহাদ’ বা ‘লাভ জিহাদ’ বলে অভিহিত করছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো।

দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের কর্মকর্তারা অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলছেন, এ আইন প্রতারণামূলক ধর্মান্তর রোধে সহায়তা করবে। বিশেষ করে তরুণীদের সুরক্ষার কথা ভেবেই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার উভয় স্থানেই ক্ষমতায় রয়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল হিসেবে পরিচিত ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি।

চার জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের মেয়েদের মুসলিম পুরুষরা অপহরণ করেছে; বাবা-মায়ের এমন পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা নতুন এই আইনে কেবল তাদেরই গ্রেফতার করছি, যাদের ক্ষেত্রে আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, এটি জোরপূর্বক ধর্মান্তরের একটি স্পষ্ট ঘটনা।’

উত্তরপ্রদেশ সরকার প্রণীত নতুন এই আইনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী একজন পুরুষ ও নারীকে বিয়ের আগে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দুই মাসের নোটিশ দিতে হবে এবং কোনো আপত্তি না থাকলে তাদের অনুমতি দেয়া হবে।

কমপক্ষে ভারতের আরও চার রাজ্য— মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, কর্ণাটক এবং আসাম রাজ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা অনুরূপ ভিনধর্মে বিয়েবিরোধী এমন আইন পাস করার পরিকল্পনা করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান কৃষক বিদ্রোহ দমনে ধর্মের ব্যবহার করতে না পেরে একের পর এক বিজেপিশাসিত রাজ্যে কথিত ‘লাভ জিহাদবিরোধী আইন’ পাস করছে বিজেপি সরকার, যাতে মূল ব্যর্থতা আড়াল করা যায়।