বিএনপির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে, বাদ পড়ছেন সিনিয়র নেতারা!

প্রকাশিত: ৩:০৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর এবার দল পুনর্গঠনে হাত দিচ্ছে বিএনপি। বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দলের অভ্যন্তরে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীদের দলীয় পারফর্মমেন্স বিবেচনা করে পদ-পদবি বণ্টনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনের পর গত কয়েকদিনে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। আর এমনটা হলে পদ-পদবি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একঝাঁক সিনিয়র নেতা। অবশ্য বয়সের কারণে স্বইচ্ছায়ও সরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কয়েকজনের।
দলের অভ্যন্তরে শীর্ষ নেতৃত্বের এমন প্রস্তুতি টের পেয়ে আগাম ঝেড়ে কাশছেন কেউ কেউ। নিজেদের অবস্থান ইতোমধ্যেই তুলে ধরছেন তারা। যার বহিঃপ্রকাশও হচ্ছে প্রকাশ্যেই। এমন পদক্ষেপে অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে পড়লে বিদ্রোহী হিসেবে দল ছেড়ে অন্যদলে কিংবা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন অনেকেই। কারো পরিকল্পনায় রয়েছে দল ভেঙে নতুন দল করার। যেমনটা ২০০৬ সালে করেছিলেন তখনকার স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।
বিএনপির সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় হারের পর গত ১ জানুয়ারি বিএনপির বিভিন্নস্তরের নেতাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে দফায় দফায় কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে বিএনপিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা হয়। নেতৃত্ব বদলের প্রসঙ্গও আসে এ আলোচনায়। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় কী তা জানতে চান তারেক রহমান। দল পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের প্রস্তাব আসে বিভিন্ন স্তর থেকে। কোনো কোনো নেতা রাখঢাক না করে দলের পুরো খোলনলচে পাল্টানোর কথা বলেন। এতে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর কথা বলা হয়।
কেউ কেউ আবার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সময়ের সিদ্ধান্ত সময়ে নিয়ে ধীর গতিতে আগাতে পরামর্শ দেন। তাদের প্রস্তাবে দলের স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্যপদ পুরনের মাধ্যমে গতিশীলতা আনার চেষ্টা করতে বলা হয়। পাশাপাশি বয়সের ভারে ন্যূজ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সম্মানজনকভাবে বিদায় দেয়ার কথা বলা হয়। দলে একজন চৌকশ মহাসচিব খোঁজার পাশাপশি স্থায়ী কমিটিতে অপেক্ষাকৃত কর্মঠ ও ঝানু রাজনীতিকদের স্থান দেয়ার প্রস্তাবনা আসে।
দলের মধ্য থেকে আসা এমন পরামর্শ মাথায় নিয়ে আগামীদিনের কর্মপরিকল্পনার ছক আঁকছে হাইকমান্ড। এতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে কী উপায়ে মুক্ত করা যায় তাও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যদি কোনো কারণে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা না যায় সে ক্ষেত্রে কাউন্সিল না করে কোনো প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের পরিবর্তন আনা যায় তাও ভাবা হচ্ছে। বিএনপির হাইকমান্ডের পরিকল্পনায় রয়েছে স্থায়ী কমিটিতে জিয়া পরিবারের সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও। এতে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান, কোকোর স্ত্রী শর্মিলী আহমেদ স্থান পেতে পারেন। স্থায়ী কমিটিতে আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আসাদুজ্জামান রিপনসহ সাবেক ছাত্রদল নেতাদের একটি অংশ স্থান পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্বইচ্ছায় সরে যেতে পারেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। বাদ পড়তে পারেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ বার্ধক্যে পড়া নেতারা।
তেমনটি ঘটলে খুব শিগগিরই বাদ পড়ার আশঙ্কায় থাকারা দল বদলাবেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এমনকি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে ‘বিএনপি (জিয়া)’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারেন তারা। তারেক রহমানের প্রভাবমুক্ত ও দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির কালিমা মুছতেই এই প্রচেষ্টা বলে প্রচারণা চালাবেন তারা। তারা বলতে চেষ্টা করবেন খালেদা জিয়া জেলে, তারেক রহমান আদালতের বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী। দেশে-বিদেশে তাদের নেতৃত্বের ক্রেডিবিলিটি নেই। এ প্রক্রিয়ার বিএনপির শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে পরিচিত জাফরুউল্লাহ চৌধুরীকে আগাম মাঠে নামানো হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যেই তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে দলের পুনর্গঠন ও নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নিজের মতামত দিতে শুরু করেছেন।
এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি দলের ভেতরে বাইরে আলোচিত হচ্ছে। মিডিয়ায়ও আসছে। তবে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঘুরে দাঁড়াতে হলে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। নেতাকর্মীদের মামলা থেকে পরিত্রাণ ও জেল থেকে মুক্ত করতে হবে এবং তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। এজন্য কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সামনে আনতে হবে। নেতাকর্মীদের পুনরায় জাগাতে হলে নেতৃত্বের পরিবর্তন আবশ্যক।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দলকে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পুনর্গঠন করতে হবে। দরকার হলে আমাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করুন, তাও নেতৃত্বের পরিবর্তন করুন।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার বলেন, বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে যা যা উদ্যোগ প্রয়োজন বিএনপি তা করবে। এজন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপি পিছপা হবে না।