বাংলাদেশে অর্থপূর্ণ সংলাপের আহ্বান জাতিসংঘের

প্রকাশিত: ১০:২৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে মহাসচিবের পর্যালোচনা জানতে চেয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র দুজারিক বলেন, নির্বাচনে জালিয়াতির তদন্ত করার এখতিয়ার জাতিসংঘের নেই। তবে সবার আগে বলতে চাই, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংকট ও সমস্যার মধ্যে থাকার পরও এত বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় দেশটির মহানুভবতায় আমরা কৃতজ্ঞ।

মুখপাত্র দুজারিক আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে যতটা সম্ভব ইতিবাচক রাখার ক্ষেত্রে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অর্থপূর্ণ সংলাপে বসার জন্য আমরা উৎসাহিত করছি। সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যর্পণে মিয়ানমারের ধীরগতিতে হতাশ জাতিসংঘ মহাসচিব

রাখাইন থেকে সামরিক অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ভূমিকা অত্যন্ত ধীরগতির বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

যে অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল তা না হওয়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মহাসচিব।

রয়টার্সের সাংবাদিক মিশেল নিকোলাসের প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব গুতেরেস বলেন, সর্বশেষ কথা বলার পর বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেছে। আমার কথা সব সময়ই এক। এটা যে শুধু ‘ফিজিক্যাল’ পুনর্গঠনের বিষয় তা নয়, এটা হলো সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে পুনর্জাগরণের বিষয়।

তিনি বলেন, সরকারের শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির বিষয় হলো সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে যতটা সম্ভব পুনরেকত্রীকরণ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেয়া। এ সমস্যার মূল কারণ সমাধানে ব্যর্থ হলে সহিংসতা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এমনটা আমরা মিয়ানমারে সম্প্রতি দেখেছি।

হতাশা প্রকাশ করে মহাসচিব আরও বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য পরিস্থিতি যেমন হওয়ার কথা ছিল তেমন হয়নি। সবকিছু চলছে খুবই ধীরগতিতে।

‘এসব মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে আমরা ভীষণ রকম হতাশাগ্রস্ত। বিশেষ করে চরম, অত্যন্ত চরম অবস্থার মধ্যে এখন বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। তাদের আমরা ভুলে যেতে পারি না।’

রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যর্পণের বিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা চাই এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে যাতে তারা স্বেচ্ছায় ফিরে যান। এক্ষেত্রে প্রথম যে পদক্ষেপটা হওয়া উচিত অবশ্যই তা হলো অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের সমস্যা সমাধান করা।

তিনি বলেন, এসব মানুষের সমস্যার বিশ্বাসযোগ্য সমাধান দেয়ার ফলেই ভবিষ্যৎ প্রত্যর্পণের পথ সুগম হবে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ।

হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। এমন বাস্তবতায় জাতিগত নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা।

এদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সমঝোতা হয়েছে। পরে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার সঙ্গেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে সহযোগিতার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে মিয়ানমার। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়নি।