বগুড়ায় মোটর মালিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, সাংবাদিক পুলিশসহ আহত ১০

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২১

বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষের ১০জন আহত হয়েছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে ও শটগানের গুলি ছুড়েছে।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

মালিক সমিতি, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।

বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইতিমধ্যে নির্বাচনী তফসিলও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর থানা যুবলীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম নির্বাচনের বিরোধিতা করে মোটর মালিক গ্রুপের কার্যালয় ও মালামাল তার হেফাজতে শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় রাখে।

মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন ও তার অনুসারীরা মঙ্গলবার সকালে চারমাথায় এলাকায় গিয়ে আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা কার্যালয় দখলের ঘোষণা দেন।

এ খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুলের লোকজন চারমাথা এলাকায় সমবেত হয়। তারা যেকোনো মূল্যে মোহন গ্রুপকে প্রতিহত করতে মাইকে ঘোষণা দেয় এবং পরিবহন শ্রমিকদের হাতে লাঠি নিয়ে অবস্থান নিতে আহ্বান জানায়।

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ ও সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ চারমাথায় অবস্থান নেয়।

পুলিশ আমিনুলকে সমঝোতায় প্রস্তাব দিলে আমিনুল তা প্রত্যাখ্যান করে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে অপর পক্ষকে প্রতিহত করবে বলে জানান।

এ সময় আমিনুল গ্রুপের লোকজন পুলিশের সামনেই লাঠি মিছিল শুরু করে। মোহন গ্রুপের প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী সান্তাহার সড়ক দিয়ে চারমাথার অদূরে এলজিইডির সামনে অবস্থান নেয়।

পুলিশ মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলেও এক সময় মোহন গ্রুপ পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আমিনুল গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে। এ সময় উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ব্যাপক ভাঙচুর চলে।

এলোপাতাড়িভাবে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহন ভাঙচুর করা হয়।

একপর্যায়ে আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের কার্যালয় ও তার পাশে অমিনুলের ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ।

প্রায় আধঘণ্টা ব্যাপী দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও তাণ্ডব চলে। এ সময় ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে জিটিভির ক্যামেরাপারসন রাজু আহম্মেদকে বেধড়ক মারধর করা হয়।

এছাড়াও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিপেটা শুরু করে।

এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে পুলিশ রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়ে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ ৯ জনকে আটক করে। সংঘর্ষের কারণে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর মোহন গ্রুপ চারমাথা এলাকা ত্যাগ করলে আমিনুল গ্রুপের লোকজন পুনরায় সমবেত হয়ে চারমাথা এলাকায় একটি পেট্রল পাম্পে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে আবারও তাদের হটিয়ে দেয়। সংঘর্ষের পর চারমাথা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ ফয়সাল মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পর্যন্ত ওই এলাকা থেকে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। আহত পুলিশ কনস্টেবল ও এক সাংবাদিককে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।