পুলিশের অপকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে: ডিএমপি কমিশনার

প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
ডিএমপি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ক্র্যাব নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। ছবি-টাইমস বিডি

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, আগে পুলিশ চাঁদাবাজি করত। সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করত। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে পেন্ডিং মামলায় চালান দিত। প্রকাশ্যে ঘুষ নিত। পুলিশের অপকর্মের সঙ্গে কোনো সাংবাদিকেরও যোগসাজস ছিল। এখন এসব বন্ধ হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা জাদুঘরে চলে গেছে। এখন পুলিশ ঘুষ খেলেও তা খায় চুরি করে, অত্যন্ত গোপনে। কারণ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারলেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গত ছয় মাসে ডিএমপিতে কোনো ভুয়া মামলা হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ ভুয়া মামলায় আসামি হয়ে থাকলে তাদের রিলিজ করে দেয়া হবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, অতীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনায় পুলিশের মনোমালিন্য ঘটনা ঘটলেও এখন এগুলো শুধুই অতীত। এখনকার সম্পর্ক অনেক চমৎকার। বর্তমানে সাংবাদিকতা পেশায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। নবীন, কর্মঠ ও শিক্ষিত তরুণরা সাংবাদিকতা পেশাকে বেছে নিয়েছেন। সব অবস্থায় সাংবাদিকদের দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করতে হবে। দেশে অনেক আন্তর্জাতিকমানের ভালো সাংবাদিক রয়েছে। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সত্য লিখতে পারে না। এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে।

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, হাতে ক্ষমতা আছে বলেই যাকে তাকে ধরে চালান দেয়া যাবে না। এ ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ২০১৫ সালে আমি যখন কমিশনার হওয়ার পর দেখি প্রায়ই সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের ভুল বোঝাবুঝি হয়। আমার অফিসের সামনে, ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সামনে সাংবাদিকদের মানববন্ধন করতে হয়েছে। কিন্তু এখন এসব অতীত। উভয় পক্ষের মনোভাব পরিবর্তন হওয়ার কারণেই এখন আর অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটছে না।

সেবার মানসিকতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করতে হবে উল্লেখ করে বলেন, পুলিশের মনোভাব পরিবর্তন করতে আমি নিয়মিত কাউন্সিলিং করি। পুলিশ সদস্যদের বল প্রয়োগের চেষ্টা এবং খবরদারির মনোভাব ত্যাগ করতে হবে।

ট্রাফিক সদস্যদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঘটনাস্থলে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়াবেন না। তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়ালে উল্টো আসামি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ঘটনাটি ভিডিও করে নিয়ে আসবেন। পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আপনাদের সঙ্গে বডিওর্ন ক্যামেরা আছে। তাই ভিডিও করতে সমস্যা নেই। পুলিশ ভুল করলে মানুষ তা বলবেই। এ জন্য ক্ষুব্ধ না হয়ে নিজেদের সংশোধন হতে হবে। পুলিশ জেগে থাকে বলেই মানুষ ঘুমাতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ২০১৬ সালে উল্টো পথে গাড়ি চলাচলে মহোৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ সমস্যা সমাধানে আগে আমি ক্র্যাব নেতাদের ডাকি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করায় এখন পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এখন ৭০-৮০ ভাগ লোক ট্রাফিক আইন মেনে চলে।

তিনি বলেন, বিদেশে মানুষ ট্রাফিক আইন মেনে বুঝায় যে, তারা কত ভদ্র। আর এদেশে আইন না মেনে বুঝায় যে, তারা কত বড় মাস্তান।

সন্ত্রাস, মাদক ও হয়রানি বন্ধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, গাড়ি রিকুইজিশন করা, ৫৪ ধারায় গ্রেফতার এবং পেন্ডিং মামলায় আসামি করার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতো। তাই ওইসব বন্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার দেশ উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, এই দেশের পাসপোর্ট হবে সবচেয়ে দামি পাসপোর্ট।

তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক শঙ্কা ছিল। কিন্তু জনগণ সন্ত্রাস নৈরাজ্য চায়নি বলেই তেমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।

আগামী দিনে দেশকে বোমা-সন্ত্রাস মুক্ত রাখতে ক্র্যাবের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আমরা এ দেশকে আরেকটি আফগানিস্তান বানাতে চাই না।

ডিএমপি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় ক্র্যাব সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার, সহসভাপতি মিজান মালিক, যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক দুলাল হোসেন মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম, কৃষ্ণপদ রায়, যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন, শেখ নাজমুল আলম এবং ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।