‘পুলিশকে লাঠিয়াল’ বলতেই ক্ষেপে যান সিইসি

প্রকাশিত: ৪:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে তুমুল উত্তাপ ছড়িয়েছে। উত্ত্যপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে দুপক্ষে।

ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের অভিযোগ, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে রাজি নন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ড. কামাল পুলিশকে লাঠিয়াল বলতেই ক্ষেপে যান সিইসি। উপরন্তু তিনি পুলিশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ‘অশোভন আচরণ’ করেন। এ কারণে তারা সভা থেকে উঠে আসেন।

সভা থেকে বেরিয়ে এসে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ড. কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে, এই কথার প্রেক্ষিতে সিইসি ক্ষেপে যান। সিইসি পুলিশের পক্ষ হয়ে কথা বলেছেন, এটা হতে পারে না। সিইসির আচরণ ভদ্রোচিত ছিলেন না। আমরা তার পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে সভা বর্জন করে চলে আসছি।

সভা থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে এবং নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। ইসি সরকারের পক্ষ হয়ে গেছে। সিইসির আচরণ ভদ্রজনিত ছিল না। এ জন্য আমরা সভা বয়কট করেছি। তবে আমরা নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেব না।

মির্জা ফখরুল বলেন, সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের হত্যা, আক্রমণ অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। পুলিশ বিরোধী দলের ওপর চড়াও হচ্ছে। বিষয়গুলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জানিয়েছি। কিন্তু তার আচরণ দেখে মনে হয়েছে তিনি এতে গুরুত্ব দেননি। এসব বিষয়ে তিনি গুরুত্ব দেখাননি। এমন আচরণ করেছেন যেন আমরা মিথ্যা অভিযোগ করেছি। এ অবস্থায় আমরা সভা বর্জন করে সেখান থেকে উঠে এসেছি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১০ জন নেতা আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে করতে যান। বৈঠকের একপর্যায়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সভা ত্যাগ করে উঠে আসনে।

সংবাদ সম্মেলনের পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সভার বর্ণনা দিয়ে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন তার বক্তব্যে সিইসির উদ্দেশ্যে বলেন, সিইসি বর্তমানে প্রধান বিচারপতির চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে জানোয়ার-লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দিচ্ছে না। এমনকি বেলা ২টার পর মাইক ব্যবহারের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার জোটেরা নিয়মকানুন না মেনে পুলিশের সহায়তায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গুণ্ডা বাহিনী আমাদের ওপর হামলা করছে। আমাদের প্রার্থীদের জীবনের দাম না থাকলেও কর্মীদের জীবনের দাম রয়েছে। তাদের তো রক্ষা করতে হবে।

এ সময় সিইসি ক্ষুব্ধ হয়ে ড. কামাল হোসেনকে বলেন, আপনি এমন কী হয়েছেন যে, পুলিশকে লাঠিয়াল-জানোয়ার বলছেন? নিজেকে কী মনে করেন? তখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান সিইসিকে বলেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ যদি সৃষ্টি করতে না পারেন, তা হলে বলে দেন-আমরা আজকেই প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বর্জনের বিষয়ে ঘোষণা দিই।

সিইসির পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে দুপুর ২টা দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সংক্ষুব্ধ হযে সভাস্থল ত্যাগ করেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, পুলিশ সর্বত্র লাঠিয়াল বাহিনীর কাজ করছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিষয়টি আমরা বলার পর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। মনে হচ্ছে উনি ওপরের কারও নির্দেশে চলছেন।

অভিযোগ জানানোর সময় আমরা ভেবেছিলাম সিইসি সহানুভূতি দেখাবেন। কিন্তু তিনি তার ধারের কাছেও গেলেন না। উল্টো পুলিশের পক্ষ নিলেন।

ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার।

বৈঠকে সিইসি কে এম নূরুল হুদা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমানসহ ইসি সচিবালয়ের আরো অনেকে।