নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ বৃহস্পতিবার

প্রকাশিত: ৩:৫২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট : নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ আগামীকাল সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। কক্ষের ধারণক্ষমতা কম হওয়ায় দুই দফায় শপথ হবে। সংসদের আইন শাখার কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও একই কথা বলেছেন। মঙ্গলবার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আগামী ৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) শপথ নেবেন। এর আগে বুধবার গেজেট প্রকাশ করা হবে।’

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৯৮ আসনের ফলাফলে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২২, ওয়ার্কার্স পার্টি তিন, জাসদ দুই, বিকল্পধারা বাংলাদেশ দুই, তরিকত ফেডারেশন এক, বাংলাদেশ জাসদ এক, জাতীয় পার্টি (জেপি) একজন জয়ী হয়েছেন।

বিএনপি জোট অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি (বিএনপি পাঁচ, গণফোরাম দুই) আসন। স্বতন্ত্রসহ অন্যরা জয় পেয়েছেন তিনটি আসনে।

সংবিধান অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের শপথ নিতে হবে। আগামী ২৮ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবনির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন।

শপথ পড়ানোর বিষয়ে সংবিধানে ১৪৮-এর ২(ক)-তে বলা হয়েছে, ১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এই সংবিধানের অধীন এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তদুদ্দেশ্যে অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি যে কোনো কারণে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করিতে ব্যর্থ হইলে বা না করিলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উহার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে উক্ত শপথ পাঠ পরিচালনা করিবেন, যেন এই সংবিধানের অধীন তিনিই ইহার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি।’

সরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডাকার বিষয়ে সংবিধানে বাধ্যবাধকতা আছে। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (২)-এর (১) দফায় বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যদের যে কোনো সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হইবার ত্রিশ দিনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য সংসদ আহ্বান করা হইবে।’ নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নামে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সরকারিভাবে ফল ঘোষণা করা হয়। কাজেই গেজেট প্রকাশের দিন থেকে এক মাসের মধ্যে সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে।

জাতীয় পার্টিই থাকছে বিরোধী দলে- ইনু : মঙ্গলবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’-এ অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) সভাপতি শ্যামল সরকারের সভাপতিত্বে সংলাপে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ৩ জানুয়ারি (আগামীকাল) নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। এর আগে বুধবার (আজ) গেজেট জারি হবে। মহজোটই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এটা অবধারিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নতুন সরকার পাব।

নতুন সরকারের আকার কেমন হবে এবং মন্ত্রিসভায় কতজন নতুন মুখ আসতে পারে- জানতে চাইলে জাসদ একাংশের সভাপতি ইনু বলেন, ‘এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে যোগ্য ও কার্যকরী লোক দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবিধানিক ও আইনগত নিয়ম রক্ষা করেই শপথ নেবেন সংসদ সদস্যরা। আর মন্ত্রিসভাও গঠন করা হবে।’

নতুন মন্ত্রিসভা কবে গঠন করা হবে- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সময়টা আমি বলতে পারব না। সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়ার পরই মন্ত্রিসভায় যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তাই এটা প্রধানমন্ত্রী ও তার দফতরই নির্ধারণ করবে কবে, কখন ও কাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।’

নতুন সরকারে কারা বিরোধী দল হবে- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় পার্টি যেহেতু দলগতভাবে আওয়ামী লীগের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসবে। প্রধানমন্ত্রী যদি আমন্ত্রণ জানান আর সেটা তারা গ্রহণ করেন তবে তারা মন্ত্রিসভায় যাবেন; গ্রহণ না করলে জোটের অন্য শরিকদের দিয়ে সরকার গঠন হবে।’

নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জের একটা হচ্ছে- সরকার যে উন্নয়ন করেছে তা রক্ষা করে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দুই. জঙ্গি সন্ত্রাস দমন করে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা বজায় রেখে সাম্প্রদায়িকতা এবং সামরিক শাসনের যে জঞ্জাল এখনও রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তা আমি পরিষ্কার করে বলছি- তিনি দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবেন এবং সুশাসনের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব দিক থেকে এই নির্বাচনে গণমাধ্যম নির্বিঘ্নে কাজ করতে পেরেছে। সেদিক থেকে আমি সন্তুষ্ট।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা মহাকর্মযজ্ঞই মহাজোট সরকারে অভাবনীয় বিজয় এনে দিয়েছে। বিএনপি প্রার্থীদের আয়েশি মনোভাব ও মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্যই তাদের ভরাডুবির কারণ হলেও আরও অনেক কারণ রয়েছে। জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা, ধ্বংসের অপরাজনীতি অনুসরণ করাও ভরাডুবির কারণ। এই নির্বাচনটা সবচেয়ে কম সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচনটা সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।’

বিএনপির পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এজেন্টরা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগের দরখাস্ত দিয়ে চলে যেতে পারতেন। আমার জানা মতে, বিএনপির এজেন্টরা কোনো লিখিত অভিযোগপত্র দেননি। এই অভিযোগটা প্রত্যাখ্যান করছি। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এজেন্ট দিতে পারেননি।’

হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ আমরা দেখেছি, সেখানে মুসলিম লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা পক্ষ ত্যাগ করেন এবং জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে নৌকার বিজয় ও বিপ্লব এনে দেন। ১৯৭০-এর নির্বাচন যেভাবে মুসলিম লীগের যুগের অবসান ঘটিয়েছে; একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেভাবে ১৯৭৫ সাল-পরবর্তী সামরিক শাসন মদদপুষ্ট সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামায়াত যুগের অবসানের সূচনা ঘটাল।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যখনই পরাজিত হয় তারা নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৯৬ সালে ও ২০০৮ সালেও তারা একই কাজ করে। এটা তাদের রাজনৈতিক বদঅভ্যাস। এই বদঅভ্যাসের সূত্র ধরে তারা আগামীতে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করবে।’

দেশবাসীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাসদ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি পুনর্নির্বাচনের দাবির মধ্য দিয়ে একটা ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করল, যা অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে।’

নতুন বছরে টেলিভিশনের সাংবাদিকের জন্য কোনো সুখবর আছে কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে ওয়েজবোর্ড গঠন করেছিলাম তার রিপোর্ট মন্ত্রিসভায় গেছে। মন্ত্রীদের নিয়ে যে উপকমিটি হয়েছে ভোটের আগে সেই কমিটির একটি সভা হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভায় সেই সাবকমিটি কাজ করবে।

রিপোর্টে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য ওয়েজবোর্ড দিতে হবে বলে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আছে। তাই ওটা দেয়ার জন্য প্রাথমিক প্রশাসনিক কাজটা সম্পন্ন হলে নতুন সরকার এবং তথ্য মন্ত্রণালয় এটা সম্পন্ন করবে। তাই নতুন বছরে আমি আশা করছি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের জন্য নতুন ওয়েজবোর্ড হবে।’