ধানের শীষ প্রার্থীর গায়ে মানুষ পোড়ার গন্ধ: রংপুরে জনসভায় শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ৩:৪১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
রংপুরের তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে রোববার নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত জনতাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: টাইমস বিডি

রংপুর বুর‍্যো:  বিএনপি-জামায়াত জোট সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা শত শত মানুষকে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে, ওরা মানুষ না, ওরা দানব। ওদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। আজ যারা ধানের শীষ নিয়ে আসছে, মানুষ পোড়ার গন্ধ তাদের গায়ে। তাদের থেকে সাবধান থাকবেন।

রোববার দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠ ও বিকালে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিতে তরুণসহ সব দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নিজের শ্বশুরবাড়ি এলাকা পীরগঞ্জে নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারুণ্যের কাছে ভোট চাই, মা-বোনদের কাছে ভোট চাই, বয়োবৃদ্ধ মুরব্বি সবার কাছে ভোট চাই। তিনি বলেন, ‘আপনারা ভোট দিন, আমরা উন্নয়ন দেব, সমৃদ্ধি দেব, সুন্দর জীবন দেব, উন্নত জীবন দেব। দোয়া করবেন, যেন ভালোভাবে কাজ করতে পারি।’

পুরো উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা দূর করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগে উত্তরবঙ্গ মানেই মঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, অনাহারী মানুষের আহাজারি ছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে উত্তরবঙ্গের দুর্দিনকে সুদিনে পরিণত করেছি, মঙ্গা দূর করেছি। এখন কোথাও মঙ্গা নেই, মানুষের পেটে খাদ্যের কোনো অভাব নেই।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকার বাইরে শেষ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে বিমানে দুপুর পৌনে ১২টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে সড়কপথে দুপুর সাড়ে ১২টায় তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠের জনসভাস্থলে পৌঁছান। সেখানে বক্তব্য শেষে পীরগঞ্জের ফতেহপুরের নিজ শ্বশুরবাড়ি ‘জয় সদন’-এ যান তিনি। সেখানে স্বামী প্রয়াত পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করেন। এরপর শ্বশুরবাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম এবং স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে বিকেল সোয়া ৩টায় পীরগঞ্জের জনসভাস্থলে পৌঁছান। এ জনসভায় বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনা সড়কপথে সৈয়দপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে পথে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও পার্বতীপুরে আরও চারটি নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেন। সন্ধ্যায় সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে বিমানে ঢাকায় ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী।

রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনটিতে বরাবরই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন এ অঞ্চলের পুত্রবধূ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে বিজয়ের পর শেখ হাসিনা এ আসনটি উপনির্বাচনে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ছেড়ে দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন তালিকায় গোপালগঞ্জ-৩ আসনের পাশাপাশি এ আসনটিতেও নির্বাচন করার কথা ছিল শেখ হাসিনার। পরে আসনটি শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ছেড়ে দেন তিনি।

নির্বাচনী জনসভায় শিরীন শারমিন চৌধুরীকে হাত উঁচিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই যে আমার মেয়েকে আপনাদের সামনে তুলে দিচ্ছি। শিরীন নির্বাচিত হলে তাকে আমরা আবারও স্পিকার করতে পারব। শিরীন যেভাবে আপনাদের জন্য কাজ করছে আমি হলে অতটা পারতাম না। কারণ আমার সারা দেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।

শ্বশুরবাড়িতে শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে বরণ : দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পীরগঞ্জের পুত্রবধূ শেখ হাসিনা উপজেলার ফতেহপুরে শশুরবাড়ি এলেন। তার আগমনকে ঘিরে পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সর্বশেষ পীরগঞ্জে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। সকাল থেকে এলাকার হাজার হাজার মানুষ তাদের পুত্রবধূ শেখ হাসিনার আগমনের প্রতীক্ষায় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকেন। শেখ হাসিনার যাত্রাপথে সমবেত এসব মানুষ হাত নেড়ে ও ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানান তাকে। জবাবে প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রতিটি নির্বাচনী জনসভা ও পথসভায়ও ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। মিয়াবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জেয়ারত করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ‘জয় সদন’-এ মধ্যাহ্নভোজ শেষে বাড়ির আঙ্গিনায় নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এর আগে সেখানে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান আত্মীয়স্বজনরা। পরে শেখ হাসিনা পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন। এতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, পীরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন আমরা করেছি। পীরগঞ্জে আরও উন্নয়নের জন্য আমি একটা মাস্টার প্ল্যান করতে বলেছি। আজ আমার করা ব্রিজের ওপর দিয়ে এখান থেকে আমি দিনাজপুর যাব। এভাবে সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন করেছি আমরা।

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। পীরগঞ্জে আপনারা আমাকেই ভোট দেবেন। শুধু ব্যালটে শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে। আমি বিশ্বাস করি, নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নৌকার বিজয় হবেই।’

তিনি বলেন, আজ যারা ধানের শীষ করে, সেই বিএনপি-জামায়াত জোটের কথা একবার চিন্তা করুন। এরা একাত্তর সালে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যা চালিয়েছে। সেই বিএনপি-জামায়াত, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, গ্রাম পুড়িয়েছে, রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে, গাছ কেটেছে।

‘যারা মানুষের গায়ে আগুন দিয়ে পোড়ায়, ওরা মানুষ না, ওরা দানব। ওদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। আজ যারা ধানের শীষ নিয়ে আসছে, মানুষ পোড়ার গন্ধ তাদের গায়ে। তাদের থেকে সাবধান থাকবেন।’

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অবহেলিত রংপুরের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা একটা কথা চিন্তা করুন, ১০ বছর আগে কোথায় ছিলেন, আর আজ কত উন্নয়ন হয়েছে। আজ প্রত্যেকটা মানুষের উপার্জন বেড়েছে। আমরা ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। ছেলেমেয়েরা সেখানে বসে কাজ করছে।’

১০ বছর আগে রংপুর এলাকার মানুষ খাবারের জন্য হাত পাততো মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, যদি ক্ষমতায় আসি, এই রংপুর থেকে মঙ্গা দূর করব। প্রতিটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’

’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মঙ্গা দূর করেছিলাম। কিন্তু ওই বিএনপি-জামায়াত জোট, লুটেরার দল, খুনির দল, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারে, তারা ক্ষমতায় এসে আবার সেই মঙ্গা শুরু করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়ী হই, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, তখন থেকে এই ২০১৮ পর্যন্ত এই ১০টা বছর রংপুরে কোনো মঙ্গা নাই। মঙ্গা আমরা দূর করে দিয়েছি। আর জীবনে কখনো এখানে মঙ্গা-দুর্ভিক্ষ ইনশাআল্লাহ হবে না।’

রংপুর-৬ আসনের প্রার্থী শিরীন শারমিন ছাড়াও রংপুর-৪ আসনের প্রার্থী টিপু মুন্সি ও রংপুর-৫ আসনের এইচএন আশিকুর রহমানকে জনসভার মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।

খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া চুরি করে আজ জেলে আছেন। আর তার ছেলে টাকা পাচার করেছে, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে- যারা একাধিক সাজাপ্রাপ্ত- এরা দেশের কী উন্নয়ন করবে? এরা দেশের কী কল্যাণ করবে? কাজেই এদের থেকে দেশবাসীকে সাবধান থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নতি হয়, তার যথেষ্ট উদাহরণ আপনারা দেখেছেন। আমরা যুবসমাজের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কারো কাছে চাকরি চাইতে হবে না, নিজেরা চাকরি দিতে পারবে, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।

সবার কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আপনারা দোয়া করবেন, যেন দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারি। বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ জাতির পিতা শেখ মুজিব চেয়েছিলেন। সেই বাংলাদেশ আমরা করে দেব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো, যার জন্য আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। পুরো পীরগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দিয়েছি। সারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমরা দিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে দেশের কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। সব ঘর আলোকিত হবে।

পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান রাঙ্গার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক- বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, রংপুর-৬ আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মণ্ডল, পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজিমুল ইসলাম শামীম, উপজেলা জাপার সম্পাদক নুরে আলম যাদু, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, টিভি অভিনেত্রী তারিন, পূর্ণিমাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

তারাগঞ্জের জনসভা : রোববার দুপুরে রংপুর-২ আসনের তারাগঞ্জ উপজেলার তারাগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন ও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর কাছে নৌকায় ভোট চাই।

পুরো রংপুর এলাকা দুর্ভিক্ষপীড়িত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ সেই দুর্দিন চলে গেছে। আজ সুদিন এসে গেছে। এখন আর মঙ্গা ও দুর্ভিক্ষ নেই। প্রতিটি মানুষের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান-সবকিছুর ব্যবস্থাই আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।

পুরনো স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, আগে শুনেছি, দেখেছি উত্তরাঞ্চলের মানুষ ছিল মঙ্গার শিকার। আজ মঙ্গা নামের অভিশাপ দূর হয়েছে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। সবাই দু’বেলা খেতে পায়। কোনো মানুষ আজ অনাহারে থাকে না।

এর আগে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে তারাগঞ্জে পৌঁছেন। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছার পর তিনি সড়কপথে তারাগঞ্জ এসে পৌঁছান। এ সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে দলের নেতাকর্মীসহ লাখো জনতা শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান।

শেখ হাসিনা তারাগঞ্জের জনসভায় আরও বলেন, জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, আজ স্বাধীনতা পেয়েছে দেশের মানুষ। আর নৌকা যখন ক্ষমতায় আসে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, দেশে শান্তি আসে, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটে।

অতীতের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই এলাকা তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জসহ সমগ্র বাংলাদেশ তিনি ঘুরে দেখেছেন দরিদ্র মানুষ, মানুষের দুর্দশা এবং হাহাকারের করুণ চিত্র।

তিনি বলেন, এইসব এলাকায় ছিল মঙ্গা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে ২০০৮ সালে আর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেছে। সে থেকে এ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কোনো মঙ্গা হয় নাই। খাওয়ার কোনো কষ্ট হয় নাই। মানুষ অনাহারে মরে নাই। মানুষ আজ দু’বেলা পেটপুরে খায়। আর যেন কোনোদিন এ দেশে খাদ্যভাব বা মঙ্গা না দেখা দেয় এ জন্য প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘জনগণ বারবার নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই তার সরকারের পক্ষে এসব উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হয়েছে।’

তিনি এ সময় এ আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউককে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে তাকে জনগণের হাতে সোপর্দ করেন। মঞ্চে তার হাত তুলে ধরে তার জন্য তিনি উপস্থিত সবার কাছে নৌকায় ভোট প্রদানের প্রতিশ্রুতি চাইলে জনগণ দু’হাত তুলে তাতে সম্মতি জানায়।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা ডিউককে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন, যাতে করে আমরা আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার নির্বাচনী মহাজোটের উল্লেখ করে যেসব স্থানে মহাজোটের প্রার্থী রয়েছে সেসব আসনের জনগণকে মহাজোটের প্রার্থীকেও ভোট প্রদানের আহ্বান জানান।

তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে জনসভায় আর বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করীম রাজু প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম।