তারেককে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৯:৫০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তার দল আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় এলে সাজাপ্রাপ্ত আসামি (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন) তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা হবে। আর আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের সব অর্জনকে নস্যাৎ এবং বাংলাদেশকে ধ্বংস করবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত বিশাল নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ সতর্কবার্তা দেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শেখ হাসিনার এই নির্বাচনী জনসভায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলা থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ যোগ দেন হন। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এ জনসভা লাখো মানুষের মহাসমাবেশে পরিণত হয়।

এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি সিলেট আসেন এবং হযরত শাজালাল (র.), শাহ পরান (র.) ও বোরহান উদ্দিন (র.) এর মাজার জিয়ারত করেন।

জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের ১০ বছরের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিজের টাকায় পদ্মাসেতু করছি। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলো। কিন্তু পরে তারা কোনো দুর্নীতি পায়নি। আমি বলেছিলাম নিজস্ব টাকায় পদ্মাসেতু করবো। এই একটা সিদ্ধান্ত সারাবিশ্বে বাংলাদেশর ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে অনেক উচ্চ আসনে নিয়ে গেছে। সেই উচ্চ আসনটা ধরে রাখতে হবে। সেটা ধরে রাখতে হলে কী করতে হবে? সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। ওই বিএনপি-জামায়াত জোট বাঙালি জাতির মান সম্মান ভূলুণ্ঠিত করেছিল। হত্যা, খুন, অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি; এটাই ছিল তাদের নীতি। রাতারাতি তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।

নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে তারা কী করেছে? এক এক সিটে ৪-৫ জনকে মনোনয়নপত্র দিয়েছে। দেওয়ার পরে কী করেছে? এক একটা সিট অকশনে (নিলামে) দিয়েছে। যে যত টাকা দেবে সে মনোনয়ন পাবে। এই অকশনে দিতে গিয়ে তাদের ছেঁড়া-বেড়া অবস্থা। এখনও তাদের ছেঁড়া-বেড়া অবস্থা। কেউ তাদের বিশ্বাস করে না। আপনাদের এই সিলেটের ইনাম চৌধুরী, তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তিনি (ইনাম চৌধুরী) কী বলেছেন, এক একজন টাকা চায়, দিতে না পারলে মনোনয়ন নেই। দিতে পারলে মনোনয়ন আছে। একজন যদি এক কোটি দেয়, তো আরেকজন দুই কোটি দেয়। আরেকজন দুই কোটি দিলে আরেকজন দেয় পাঁচ কোটি। কেউ পাঁচ কোটি দেয় যদি, আর কেউ সাড়ে পাঁচ কোটি দেয়, তাহলে পাঁচ কোটি বা সাড়ে পাঁচ কোটি আসে। এইভাবে তারা অকশন দিয়েছে। আপনারা বলেন, এরা কি রাজনীতি করে। রাজনীতি করে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান লন্ডনে ষড়যন্ত্র করছে। লন্ডনে বসে লাটাই ঘোরায়। আল্লাহ যদি দিন দেয়, আমরা আবার ক্ষমতায় এলে ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ধরে নিয়ে এসে বাংলাদেশে তার বিচারের রায় কার্যকর করবো। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। এই বাংলাদেশ সারাবিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছে, এই সম্মান নিয়ে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ আজকে বিদেশে গেলে সম্মান পায়। সেই সম্মান নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।

‘এই কারণে সিলেটবাসীর কাছে আমি আবারও এসেছি। কেন এসেছি? আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবেন। সেই আশায় আপনাদের কাছে এসেছি। আমি শুধু নৌকা মার্কা নয়, আমরা মহোজাট করেছি। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন আপনারা।’

এ সময় তিনি সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের সব প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন।

সিলেট বিভাগের মানুষের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আমরা নৌকা মার্কায় ভোট চাই। কারণ নৌকা মার্কায় উন্নয়ন। আর ধানের শীষ মার্কা মানে কী? দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অগ্নিসন্ত্রাস। তারা স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দিয়েছে, যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দিয়েছি, তাদের আজকে তারা কাছে টেনে নিয়ে নির্বাচনের অংশীদার হয়েছে। এরা ক্ষমতায় আসা মানে বাংলাদেশকে ধ্বংস করবে, দেশের সব অর্জন নস্যাৎ করে দেবে। কারণ এরা স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করে না।

এ পর্যায়ে শেখ হাসিনা জনতার উদ্দেশে ভোট চেয়ে বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন কি-না তা হাত তুলে দেখান। এসময় উপস্থিত জনতা হাত তুলে সাড়া দেয় প্রধানমন্ত্রীকে।

দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ইনশাল্লাহ নৌকার বিজয় হবে। এই নৌকা মার্কাই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবো ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদযাপন করবো। ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত দেশ হবে।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এ জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী।