টিসিবি’র কার্ড বিতরণে দুর্নীতি, বঞ্চিত হয়েছে অসচ্ছলেরা

মাহমুদ আহসান হাবিব মাহমুদ আহসান হাবিব

জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০২২

গত কিছুদিন ধরে দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির পর সরকার নিজস্ব বিপনন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)র মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য তুলনামুলক কম দামে পণ্য বিক্রি করছে। সারা দেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁতেও এ সুবিধা চালু হলেও এ প্রক্রিয়ায় হয়েছে অনেক দুর্ণীতি। যার প্রমান মেলে ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকা সহ আশে পাশের এলাকা গুলোতে।

ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিন মজুর আবু তাহের এবং একই ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা চৌধুরী। তাদের এলাকার মিল থাকলেও অমিল রয়েছে জীবন যাপনে। আবু তাহের দিন মজুরি করে আর গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চালালেও টিসিবির কার্ড পাননি তিনি। অপরদিকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মনোয়ারা চৌধুরী একাধারে একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এবং শহরের প্রাণকেন্দ্রের বহুতল বাড়ির মালিকও তিনি। সরকারের ভর্তুকিমূল্যের পণ্য ক্রয়ের সুবিধা থেকে তাহেরের মত নি¤œ বিত্ত দিন মজুর বঞ্চিত হলেও বঞ্চিত হননি মনোয়ারা চৌধুরীর মত সচ্ছল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

টিসিবির কার্ড পাওয়া না পাওয়া নিয়ে এ দুই চিত্রের অসংখ্য সাদৃশ্য পাওয়া যাবে ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকায়। সরকারের টিসিবির পণ্যের তালিকায় নি¤œ ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের নাম থাকার কথা থাকলেও অজানা কারনে সে নিয়ম খর্ব হয়েছে অনেকটাই। ফলে সরকারের ভর্তুকিমূল্যের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের স্বল্প আয়ের মানুষরা। অভিযোগ উঠেছে নীতিমালা ভেঙে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় চলমান এই কর্মসূচির তালিকায় আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে কার্ড বরাদ্দের ।

নিজের নামে কার্ডের কথা শুনে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা চৌধুরী বলেন ‘আমি কারও কাছে কার্ড চাইনি। আমি তো কার্ড পাওয়ার যোগ্যদের মধ্যে পড়িও না। তারপরও আমার নামে কীভাবে এল, তা আমি না।’

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়ে ৯২ হাজার ৬৮৮টি পরিবারের মধ্যে টিসিবির পণ্য কেনার কার্ড বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার কার্ড। টিসিবির ডিলাররা এই কার্ডধারীদের কাছে ‘প্যাকেজ’ হিসেবে তিনটি পণ্য (দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল) ৪৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় বড় মাঠে টিসিবির উপকারভোগীদের লাইনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলামকে দেখা যায়। একই লাইনে দাঁড়ানো ময়নুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, সফিকুল ইসলাম এলাকার একজন ধনী ব্যক্তি। তার বহুতল বাড়ি ও অনেক জমিজমা আছে। এই কার্ড তিনি পান কিভাবে ?
বুধবার সকালে ময়নুল ইসলামের কথার সত্যতা পাওয়া যায়। সফিকুলের বাড়িটি সত্যিই দোতলা এবং তিন তলার কাজ চলমান।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের ট্যাগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা বাজার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা রতন কুমার রায়। জানতে চাইলে রতন বলেন, শুধু ৪ নম্বর ওয়ার্ডেই নয়, সব ওয়ার্ডেই কিছু সচ্ছল ব্যক্তি টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদাম সরকার বলেন, খুব কম সময়ের মধ্যে তালিকা করতে হয়েছে বলে সে তালিকায় কিছু ভুল হয়েছে। তবে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা চৌধুরীর নামে কার্ড থাকার প্রসঙ্গে তিনি কিছু জানেন না।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, যেকোনো মানবিক সহায়তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গেলে কিছু ভুলভ্রান্তি থেকে যায়। পাওয়ার যোগ্য নন, এমন ব্যক্তিরা টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করে তাদের কার্ড বাতিল করা হবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহেই সাংবাদিদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি সম্মেলন করেছি। সেখানে আমরা স্পষ্ট বলেছি যারা এসব বিষয়ে দোষী থাকবে তাদেরকে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবেনা। টিসিবির পণ্য বিপননে যেসব অভিযোগ উঠেছে আমরা সেসব তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।