গুগল ম্যাপে ‘শহিদ আবরার হল’, খুনিদের নামে শৌচাগার

প্রকাশিত: ৪:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৯

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বর্বর নির্যাতনে নিহত হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের নামে শেরেবাংলা হলের নামকরণ করা হয়েছে।

 

গুগলের মানচিত্রে সার্চ দিলে এখন এমনটাই দেখা যাচ্ছে। যদিও বুয়েট প্রশাসন কিংবা সরকারিভাবে এরকম কোনো উদ্যোগ নেয়ার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

এছাড়া হলের ভেতরে থাকা চারটি টয়লেট বা শৌচাগারের নামকরণ করা হয়েছে আবরারের খুনিদের নামে।

বুধবার সকাল থেকেই স্থান খোঁজার জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল ম্যাপে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নাম পরিবর্তিত হয়ে দেখাচ্ছে শহীদ আবরার হল।

 

হলের মসজিদের নাম হয়েছে শহীদ আবরার হল মসজিদ। এই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে গত ৬ অক্টোবর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধরে নিহত হন আবরার ফাহাদ।

এর আগে এসব টয়লেটের কোনো নাম না থাকলেও গুগল ম্যাপ বলছে, টয়লেটগুলোর নাম এখন কিলার রবিন পাবলিক টয়লেট, কিলার অনিক সরকার পাবলিক টয়লেট, অপ্রেসার রাসেল পাবলিক টয়লেট ও অমিত সাহা পাবলিক টয়লেট।

এমন নামকরণের পেছনের রহস্য এখনো জানা যায়নি। সাধারণত গুগলের কমিউনিটি মেম্বারদের রেফার থেকে কোনো বিষয়ে নামকরণ করা হয় গুগল ম্যাপে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুগল কমিউনিটি মেম্বার থেকে এক বা একাধিক সদস্য স্থাপনাগুলোর এমন নামকরণ করে রেফার করেছেন। যা অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপডেট হয়েছে গুগলের ম্যাপে। তবে গুগল কর্মকর্তাদের নজরে আসলে মুছে যেতে পারে নতুন নামগুলো বলে জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।

এদিকে এ বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ লোকাল গাইডের মডারেটর ও গুগল ম্যাপ মেকারের সাবেক রিজনাল লিড মাহবুব হাসান। তিনি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন- আপনারা এখানে হয়তোবা সকলে জানেন গুগল ম্যাপস একটি ভলান্টারি কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়।

এখানে লোকজন নির্দিষ্ট একটা লেভেল অর্জন করার পরে চাইলে কোন স্থানের নাম যুক্ত করা পরিবর্তন করতে সক্ষমতা রাখে। হয়তোবা তারই একটা অপব্যবহার হচ্ছে এই বুয়েটের হল ইস্যুতে। আবরার হত্যাকাণ্ডের আমি নিজেও ব্যথিত, কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা হওয়া চাই প্রতিবাদের মত।

এই স্থানের নামগুলো গুগোল পরিবর্তন করেনি করেছে কিছু ভলান্টিয়ার লোকজন। গুগল ম্যাপ শুধুমাত্র বাংলাদেশের লোকজন ব্যবহার করেনা আন্তর্জাতিক লোকজনও বাংলাদেশের স্থান খুঁজতে ব্যবহার করে। সেখানে সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে না থাকে কিংবা বুয়েট কর্তৃপক্ষ ওই স্থানে আমরা ভলান্টিয়াররা এ ধরনের গর্হিত কাজ করে অপরাধ করছি।

সব কিছু আবেগ দিয়ে চলে না কোন কোন সময় ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হয় আসলে এই কাজটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত। সকলের প্রতি অনুরোধ বুয়েটের হল নিয়ে আপাতত মাতামাতি করে ব্যাপারটা আরও বেশি ব্যাক্কল মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে না দেওয়াটাই ভালো।

সপ্তাহ কিংবা মাসখানেক যাক এরপরে আমরা যারা লোকাল গাইড রয়েছে আবার এডিট করে সেটাকে পূর্বের অবস্থানে নিয়ে আসব আশা করি। আমরা বারবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রমাণ করছি আমরা অতি উত্তেজিত, বর্বর এবং অসামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানেই সবকিছু নয়।

আর একটা স্থানের নাম পরিবর্তন করে আপনি রাষ্ট্র উদ্ধার করে ফেলেননি; পারলে সরকারের বা বুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করুন হলের নাম পরিবর্তন করতে কিংবা লাইব্রেরির নাম আবরারের নামে করলে সেটা হতে পারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

এর আগেও ২০১১ সালে বারবার ভারত দূতাবাসের সামনে ফেলানী রোড লিখছিল তখন আমরা প্রায় রাত জেগে দুইদিন ম্যাপ ঠিক করতাম। তাই সবার প্রতি অনুরোধ এই ধরনের ভিডিও কিংবা বিভিন্ন নিউজ শেয়ার না করে চুপচাপ থাকা। আশা করি তাদের পাগলামি কমলে এরপরে আমরা আবার সকলে মিলে স্থানগুলো ঠিক করে নেব।