ক্যান্সার প্রতিরোধ করবে মুরগির ডিম!

প্রকাশিত: ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০১৯

প্রাণঘাতী রোগ ক্যান্সার প্রতিরোধে নানা রকমের চিকিৎসার কথা শোনা গেলেও এবার সেই রোগ নিয়ন্ত্রণ করবে মুরগির ডিম।

এই ডিম সাধারণ মুরগির পাড়া কোন ডিম নয়। মুরগির শরীরে জিনগত কিছু পরিবর্তন ঘটানোর পর ওই মুরগি যে ডিম পাড়বে সেটা দিয়েই এই চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের ডিমে এমন কিছু ওষুধ থাকবে যা দিয়ে আর্থ্রাইটিসসহ কয়েক ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা করা সম্ভব। এছাড়া এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক পরিমাণেও ওষুধ তৈরি করা সম্ভব।

এছাড়া এসব ওষুধ উৎপাদন করতে কারখানায় যে খরচ হবে, মুরগির মাধ্যমে এই ওষুধ তৈরি করলে খরচ কমবে অন্তত ১০০ গুণ।

এর আগে বিজ্ঞানীরা ছাগল, খরগোশ এবং মুরগির শরীরে জিনগত কিছু পরিবর্তন ঘটালে তাদের ডিম কিম্বা দুধে এমন কিছু প্রোটিন তৈরি হয় যা ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এগুলোর চেয়েও মুরগির ডিম দিয়ে তৈরি ওষধ অনেক বেশি কার্যকরী, উন্নত মানের এবং এই পদ্ধতিতে খরচও অনেক কম।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসলিন টেকনোলজিসের গবেষক ড. লিসা হেরন বলেন, ডিম পাড়লে মুরগির স্বাস্থ্যেরও কোনো ক্ষতি হয় না।

তিনি বলেন, তারা বড় বড় খোপে বাস করে। অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক উপায়ে তাদেরকে প্রতিদিনের খাবার ও পানি দেওয়া হয়। ডিম পাড়া তো তাদের জীবনে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। মুরগির স্বাস্থ্যের ওপর এর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।

ড. হেরন বলেন, এই পদ্ধতিতে যে খরচ হবে সেটা কারখানায় এসব প্রোটিন উৎপাদনের খরচের তুলনায় ১০ থেকে ১০০ গুণ কম।

মুরগির ঘর তৈরি করতে খুব বেশি ব্যয় করতে হয় না বলেই খরচ কম হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহে নানা রোগের জন্ম হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো আমাদের শরীর কোনো একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক কিম্বা প্রোটিন খুব বেশি পরিমাণে তৈরি হয় না। কিন্তু এসব প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করার মাধ্যমে অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ওষুধ প্রস্ততকারক বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কারখানায় এসব প্রোটিন উৎপাদন করে থাকে-যাতে অনেক অর্থ খরচ হয়।

মুরগির ডিএনএর ভেতরে মানুষের এমন একটি জিন ঢুকিয়েছেন যা মানবদেহের প্রোটিন তৈরি করে থাকে বলে জানান ড. হেরন এবং তার সহগবেষকরা।

তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এর ফলে মুরগির ডিমের শাদা অংশের মধ্যে ওই প্রোটিন পাওয়া গেছে। মুরগির ডিম ভেঙে, শাদা অংশকে কুসুম থেকে আলাদা করে দেখতে পেয়েছেন যে তাতে প্রচুর পরিমাণে মানব প্রোটিন রয়েছে।

প্রথম প্রোটিনটি ক্যান্সার-প্রতিরোধী এবং দ্বিতীয়টি ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ওষুধের একটি ডোজ তৈরি করতে মাত্র তিনটি ডিমই যথেষ্ট। এবং একটি মুরগি বছরে ৩০০টির মতো ডিম পাড়তে পারে।

গবেষকরা বলছেন, প্রচুর মুরগি চাষের মাধ্যমে এসব ওষুধ বাণিজ্যিক হারেও উৎপাদন করা সম্ভব।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব মুরগি থেকে প্রাণী-স্বাস্থ্যেরও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা যাবে।

এ বিষয়ে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলেন স্যাঙ বলেন, মুরগির ডিম থেকে আমরা এখনও মানব দেহের ওষুধ তৈরি করিনি। তবে এই গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে মানুষের শরীরে ক্যান্সারসহ নানা রোগের চিকিৎসায় মুরগির ডিম থেকে পাওয়া এসব প্রোটিন ব্যবহার করা সম্ভব।

এসব ডিম শুধু পরীক্ষার জন্যেই উৎপাদন করা হয়েছে। বিক্রির জন্যে এখনও বাজারে ছাড়া হয়নি বলে তিনি জানান।

সূত্র: বিবিসি