ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ীদের শপথ নেয়ার আহ্বান ওবায়দুল কাদেরের

প্রকাশিত: ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট : জনগণের রায় মেনে নিয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী নেতাদের শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলনের ঘোষণা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলন করার মতো কোনো ‘অভজেকটিভ কন্ডিশন (বাস্তব অবস্থা)’ নেই।

আন্দোলনে অংশ নেয়ার মতো কোনো ‘সাবজেকটিভ প্রিপারেশন (মানসিক প্রস্তুতি)’ও তাদের নেই। এ অবস্থায় আন্দোলনের সব সূত্র তাদের বিরুদ্ধে। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তাদের নেতাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখেছেন? এত নার্ভাস! তারা হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। নেতারাই হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। কর্মীরা কীভাবে আশাবাদী হবে? কর্মীদের মধ্যে কীভাবে গতি আসবে?

বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলন করতে হলে যেরকম চেতনা দরকার, যেরকম মানসিকতা দরকার, কর্মীদের সুসংগঠিত করতে যেরকম প্রস্তুতি দরকার, সেই প্রস্তুতিটা তাদের মধ্যে আছে বলে মনে হয় না। যদি থাকত, তাহলে সারা দেশে তাৎক্ষণিক একটা মিছিল করতে পারত, এরকমটাও দেখলাম না। নির্বাচন নিয়ে যে আপত্তি তারা করেছে, এর একটা প্রতিবাদও কোথাও দেখলাম না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেত্রী জেলে, তারপরও তারা কোনো সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করতে পারেনি। যা তারা এতদিন করতে পারেনি, এখন তাদের আরও ভাঙা হাট। এই ভাঙা হাট নিয়ে নতুন করে কোনো আন্দোলনের সক্ষমতা অর্জন করবে, এটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বিএনপি অচিরেই কোনো আন্দোলন গড়ে তুলবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

নতুন সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ একটাই- যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং বিজয় পেয়েছে।

দেশের জনগণের কাছে, জাতির কাছে ইশতেহারে যেসব ওয়াদা করা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নই হচ্ছে আমাদের চ্যালেঞ্জ। বিজয়ের পরে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি দলের কী আহ্বান থাকবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধৈর্য ধরে বিজয়কে ধরে রাখতে হবে। কেউ যাতে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি না করে। প্রতিপক্ষের ওপর কোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক কোনো কিছু না করে- সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এমপি-মন্ত্রীদের শপথ কবে নাগাদ হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারির মধ্যে এমপি এবং মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে।

এ সময় ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দিন সকাল ৭টায় রাজধানীর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। একই দিন বিকাল ৩টায় ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের নির্বাচন ১৯৭০ ও ১৯৫৪ সালের মতো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সারা দেশে যে গণজোয়ার, ’৭০ সালের পর আমরা এমন জোয়ার দেখিনি। ’৭০ সাল, ’৫৪ সালের নির্বাচনের ফল যেমনটা নৌকার পক্ষে হয়েছিল, এবারও সেরকমটাই হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি অবাক হয়েছি, এত বড় দল বিএনপি, যার কোনো সাংগঠনিক অবকাঠামোই নেই! তারা যে আন্দোলন করতে পারেনি, সাংগঠনিক কাঠামোতে দুর্বলতা এটাই ছিল বড় কারণ। এবারের নির্বাচনে দেখা গেছে, তারা তাদের সেই সাংগঠনিক শক্তিটা প্রদর্শন করতে পারেনি।

তাদের অবস্থা এতই দুর্বল ও নড়বড়ে যে, যাদের হেভিওয়েট বলা হয় তারাও নিজেদের কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেনি। এজেন্ট না দিতে পারলে ভোটের ফলাফলের প্রতিক্রিয়া তো এমন হবেই। আমরা তো তাদের অনুরোধ করেও এজেন্ট দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারিনি।

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পরাজয়ের কারণ প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, কোথাও তাদের পোস্টার নেই, ব্যানার নেই। এগুলো কিসের লক্ষণ? নির্বাচনে পরাজয়ের আগেই তারা হাল ছেড়ে দিয়েছিল। তাহলে নির্বাচন করবে কেমন করে? নির্বাচন করার মতো কোনো প্রস্তুতিও তাদের মধ্যে ছিল না। এবার তাদের পরাজয়টা ছিল অবধারিত। পরাজয়টা হয়তো কোনো কোনো জায়গায় অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। সেটাও তাদের ভুলের কারণে।

আপনি এজেন্ট দেবেন না, তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কী প্রয়োজন ছিল? আপনি ব্যানার-পোস্টার করবেন না কেন? যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তাহলে প্রচারে পিছিয়ে ছিলেন কেন? আসলে নির্বাচনের নামে একটা নাটক তারা করেছেন, সারা বিশ্বকে দেখানোর জন্য এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করেনি।

এ সময় নিজের নির্বাচনী আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, মওদুদ আহমদ সাহেবের সঙ্গে এমন জয় আমি আশা করিনি। আমি ভাবছিলাম তিনি থাকবেন, ওনার এজেন্টরা থাকবেন, তাহলে তো ভোটের ব্যবধানটা অনেক কমে যেত। এত ব্যবধান হতো না।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐকমত্যের সরকার হবে, নাকি তারা বিরোধী দল হিসেবে থাকবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টা শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।