এরশাদের অপেক্ষায় জাপা নির্বাচনী প্রচারণায় ভাটা

প্রকাশিত: ১:১৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। নির্বাচনী মাঠ চষিয়ে বেড়াচ্ছেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। শুধু ব্যবস্থা নেই জাপার নেতাকর্মীদের। প্রচারণায় নেই জোয়ার, চলছে ভাটার টান। দলীয় প্রধান এইচ এম এরশাদের অনুপস্থিতির কারণে তাদের এখন পর্যন্ত নির্বাচনী অনেকটাই নিষ্ক্রিয় জাপার নেতাকর্মীরা। কবে ফিরবেন এরশাদ? দেবেন দিক-নির্দেশনা? সেই অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এখন বিরামহীনভাবে নির্বাচনী মাঠে অবস্থান করছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। নানা অঙ্গীকার আর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়ছেন, ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে ব্যতিক্রম শুধু জাপার নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে। আর দলীয় প্রধান এইচ এম এরশাদ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে তার নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৩ কিংবা ঢাকা-১৭ আসনে প্রচারণার কোনো উত্তাপ নেই। দায়সাড়াভাবে দলীয়প্রধানের ছবিসহ কিছু পোস্টার লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে অর্থের অভাবে রংপুরে এরশাদের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে।
তা ছাড়া এরশাদের অনুপস্থিতির কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে পার্টির প্রচারণার কোনো উদ্যোগও চোখে নেই। বনানী কার্যালয় অনেকটাই নেতাকর্মীশূন্য। কাকরাইল কার্যালয়েও কেউ কেউ অলস সময় পার করছেন। নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন সিঙ্গাপুরের দিকে। কবে ফিরবেন চেয়ারম্যান, কবে নির্বাচনী ঢাকঢোল বেজে উঠবে এমন ভাবনাতেই সময় কাটছে তাদের।
নির্বাচনী হাওয়া শুরুর কয়েক মাস আগে থেকেই রাজনীতির মাঠে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলীয় সভার নামে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও চোখ ধাঁধানো ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার উদ্বোধনও করেছিলেন তিনি। গত ২৬ নভেম্বর পার্টির মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত করা নিয়ে জটিলতায় পাল্টে যায় মাঠের চিত্র। নেতাকর্মীদের ক্ষোভ, অসন্তোষ আর বিভক্তির কারণে পার্টিতে ঘটে ছন্দপতন। এর মধ্যে আবার পার্টিপ্রধানের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ঘনঘন যাওয়া-আসা নিয়েও নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে খোদ মহাসচিবসহ শীর্ষ দুয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। শুরু হয় পার্টির ভেতরে টানাপোড়েন। বদল ঘটে মহাসচিব পদে। আর এর প্রভাব পড়ে নির্বাচনী প্রচারণায়।
গত ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ ও আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর দিনে দেশ ছাড়ার আগে এরশাদ আবার নাটকীয়ভাবে পার্টির সার্বিক দায়িত্ব দিয়ে যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। তবে বিশেষ দায়িত্ব পাওয়ার পরও তিনি তেমন জনসমক্ষে আসছেন না। এর মধ্যে গত ১৪ ডিসেম্বর বনানী কার্যালয়ে হাজির হয়ে দলীয় ইশতেহার ঘোষণা করেই পার্টি অফিস ত্যাগ করেন তিনি। শুধু জানিয়ে যান, শিগগিরই পার্টিপ্রধান এরশাদ দেশে ফিরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন।
আরেক নেতা জানান, আগামী ২২ ডিসেম্বর পার্টিপ্রধানের দেশে ফেরার কথা থাকলেও গতকাল (বুধবার) নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন যে, এরশাদ আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এমন অবস্থায় নির্বাচনের আগে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-১৭ আসনে এরশাদের পক্ষে প্রচারণার দায়িত্ব পালন করা এস এম ফয়সল চিশতী ভোরের কাগজকে বলেন, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতোই নির্বাচনী প্রচারণার সব ধরনের পরিকল্পনা ছিল। তবে পার্টিপ্রধানের অনুপস্থিতি ও নিজ নিজ আসনে শীর্ষ নেতাদের ব্যস্ততার কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।