আ.লীগ-বিএনপির দফায় দফায় সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার চরপাড়া বাজারে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে ১১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও চারটিতে অগ্নিসংযোগ, ছয়টি মুদি দোকান ও দুটি আওয়ামী লীগের আঞ্চলিক কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

পরে অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁছে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সোনাতলা উপজেলার চরপাড়া বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া-১ আসনটি সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ধানের শীষের প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নানের নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ধানের শীষের প্রার্থী কাজি রফিকুলের পক্ষের নেতাকর্মীরা সোনাতলা উপজেলায় গণসংযোগ করার ঘোষণা দিলে নৌকার সমর্থকরাও গণসংযোগের ঘোষণা দেয়।

এ নিয়ে সকাল থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। ধানের শীষের প্রার্থী রফিকুল বেলা ১১টার দিকে বগুড়া শহর থেকে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সোনাতলায় গণসংযোগে যাওয়ার পথে গাবতলী থানার সুখানপুকুর এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

সেখান থেকে কিছু সমর্থক নিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী রফিকুল গণসংযোগে বের হন। গাড়িবহর সোনাতলা উপজেলা সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ বটতলা এলাকায় পৌঁছালে একদল যুবক রফিকের গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং গাড়িবহরে থাকা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়।

খবর পেয়ে সুখানপুকুরে আটকে থাকা কাজী রফিকের কর্মী-সমর্থক পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সোনাতলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মোটরসাইকেলবহর চরপাড়া বাজারে পৌঁছালে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ধানের শীষের কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে।

এতে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষ। উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানের শীষের নেতাকর্মীরা যোগ দেয়। একপর্যায়ে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা পালিয়ে যায়।

সংঘর্ষ চলাকালে সোনাতলার চরপাড়া বাজারে থাকা আওয়ামী লীগের আঞ্চলিক অফিস, ছয়টি মুদি দোকান, পাশের হুয়াকুয়া গ্রামের থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকটি বাড়িতে হামলা করে। নির্বাচন উপলক্ষে তৈরি করা নৌকা প্রতীক পুড়ে দেয়া হয়। সংঘর্ষের সময় দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ ১১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। চারটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁছে ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং ১৬ জনকে আটক করে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়। তাদেরকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ধানের শীষের প্রার্থী কাজি রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার আমাদের কর্মসূচির বিষয়টি সোনাতলা থানার ওসি ও ইউএনওকে জানানো হয়। নৌকার কর্মী-সমর্থকরা এলাকায় যেতে দেবে না মর্মে আগে থেকে প্রচার করে আসছিল। এ কারণে পুলিশকে জানানো হয় বিষয়টি। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা আমার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালিয়ে মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি আমরা।

সোনাতলা থানা পুলিশের পরিদর্শক জাহিদ হোসেন মন্ডল বলেন, কাজী রফিকের বহরে থাকা দুটি মাইক্রোবাস আটক করে তল্লাশি চালিয়ে ইট-পাটকেল ও লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে। মাইক্রোবাস দুটি আটক করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজউদ্দিন বলেন, একসঙ্গে এতগুলো মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের সামিল।

সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল করিম শ্যাম্পু বলেন, বিএনপির মিছিলকারীরা লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়ায় ভোটারসহ সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাদের মিছিল থেকে হামলা করায় প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দুটি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর এবং ১৫-২০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়েছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, অতিরিক্তি পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চরপাড়া এলাকায় অবস্থান করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।