আরাফার দিনের রোযা কবে রাখতে হবে?

প্রকাশিত: ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২১

হাদীসে ইয়াওমে আরাফাহ্ বা ‘আরাফার দিনের রোযা’ রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব ও ফজীলত বর্ণিত হয়েছে।

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي قَتَادَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏ وَقَدِ اسْتَحَبَّ أَهْلُ الْعِلْمِ صِيَامَ يَوْمِ عَرَفَةَ إِلاَّ بِعَرَفَةَ ‏.‏

হযরত আবু কাতাদাহ্ রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আরাফার’ দিনে সিয়াম পালনের ফজীলতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন- আমি মনে করি, আরাফার দিনে সিয়াম পালনে আল্লাহ তা’আলা বিগত বছরের গুনাহ ও আগামী বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (জামে’ তিরমিযী, হাদীস নম্বর: ৭৪৯, সহীহ মুসলিম: হাদীস নম্বর: ১১৬২)

আরাফার দিনের রোযা ৮ তারিখে নয়, ৯ তারিখে রাখবে। ইয়াওমে আরাফাহ্ থেকে যিলহজ্বের ৯ তারিখই উদ্দেশ্য।

কারো ওয়াসওসাহ্ যেন আমাদেরকে ফজীলত থেকে বঞ্চিত না করে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এবাদতের ক্ষেত্রে তার নিজ এলাকার মাস, তারিখ ও সময়ই গ্রহণযোগ্য।

ইয়াওমে আরাফাহৃ’ হচ্ছে ওই তারিখের (৯ যিলহজ্বের) পারিভাষিক নাম।
যেহেতু হজের প্রধান রুকন ‘আরাফায় অবস্থান’। তারিখ হিসাবে ৯ যিলহজে তা আদায় করা হয়, তাই এ তারিখেরই নাম প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে ‘ইয়াওমে আরাফাহ্’ বা আরাফার দিন।

ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন যে ৯ যিলহজ- এর আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো- ‘তাকবিরে তাশরিক’ সংক্রান্ত হাদীস শরীফটি।
এটি আরাফাহ্ বা হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিশেষ আমল নয়। এটি শুরু হয় ৯ যিলহজের ফজরের নামায। থেকে।
অথচ যে দলিল দ্বারা ৯ তারিখ থেকে তাকবিরে তাশরিক শুরু হওয়া প্রমাণিত সে হাদীসেও ‘ইয়াওমে আরাফাহ্’ বা আরাফার দিন শব্দই আছে।

عَنْ عَلِيٍّ «أَنَّهُ كَانَ يُكَبِّرُ مِنْ صَلَاةِ الْفَجْرِ يَوْمَ عَرَفَةَ، إِلَى صَلَاةِ الْعَصْرِ مِنْ آخِرِ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ»

হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন- তিনি ইয়াওমে আরাফাহূ বা আরাফার দিন (৯ যিলহজ) ফজরের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পাঠ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ্, হাদীস নম্বর: ৫৬৩২)

আরেকটি বিষয়: যদি আরাফার দিন বলতে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ৮ তারিখ উদ্দেশ্য হয় তাহলে যেহেতু ইয়াওমুন নাহর ঠিক ইয়াওমে আরাফাহ্-এর পরের দিনকেই বুঝায়, সুতরাং কুরবানী করতে হবে ৯ যিলহজ্ব। কারণ সৌদি আরবে সেই দিনকেই ইয়াওমুন নাহর বলে।

অতএব, সকল দেশের অধিবাসীগণ স্ব স্ব দেশের তারিখ মোতাবেক যিলহজ মাসের নয় তারিখে আরাফার রোযা রাখবে। তথা যে দেশে যখন নয় যিলহজের দিন আসবে, সে দেশের অধিবাসীগণ তখনই আরাফার দিনের রোযা রাখবে। যেমন- নামায, রোযা, ঈদ, কুরবানী, শবেবরাত,ইত্যাদি বিশ্বের সমস্ত মুসলমানগণ আপন আপন দেশের তারিখ ও সময় অনুযায়ী আদায় করে থাকে। এ ক্ষেত্রেও ঠিক তা-ই করতে হবে। সৌদি আরবের তারিখ অনুযায়ী এবাদত- বন্দেগী করার কথা কুরআন-হাদীসের কোথাও বলা হয়নি। তাই নিজ দেশে চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করেই সকল এবাদতের মতো ৯ যিলহাজ্বের তথা ইয়াওমে আরাফাহ্-এর রোযা রাখতে হবে। কারো ওয়াসওসাহ্ যেনো আমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে।

লেখক- মুফতি শফি কাসেমী

মুহাদ্দিস, জামিল মাদরাসা বগুড়া।